নাসিরনগরে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতি, মরদেহের ওপর হামলা

New-Project-10-9.jpg
২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় এক হৃদয়বিদারক ও ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২২ মে) গভীর রাতে বুড়িশ্বর ইউনিয়নের তিলপাড়া এলাকায় লাশবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতি চালিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা নারীসহ নয়জন স্বজনকে মারধর ও গাড়ি ভাঙচুর করার পাশাপাশি মরদেহের ওপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার অভিযোগ উঠেছে।

নাসিরনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খায়রুল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এটি একটি দূরবর্তী হাওর এলাকা, যেখানে আশপাশে কোনো বসতি নেই। ডাকাতরা এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে এবং দোষীদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে জানা যায়, উপজেলার পূর্বভাগ ইউনিয়নের মুকবুলপুর গ্রামের বাসিন্দা ক্যান্সার আক্রান্ত ছবদর আলী (৭০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার মিরপুর আহসানিয়া ক্যান্সার হাসপাতালে মারা যান। রাতেই পরিবারের সদস্যরা মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামে ফিরছিলেন। তিলপাড়া এলাকায় পৌঁছালে সড়কে ফেলা গাছ দিয়ে ডাকাতরা গাড়ির গতিরোধ করে। এরপর অ্যাম্বুলেন্সে হামলা চালিয়ে নয়জনকে পিটিয়ে আহত করে এবং মরদেহের সঙ্গেও অমানবিক আচরণ করে।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন অ্যাম্বুলেন্সচালক মো. ফিরুজ মিয়া, মালিক মো. খলিল মিয়া, রাসেল মিয়া, ছালেক মিয়া, নাহিদ মিয়া, মো. আলমগীর মিয়া, মো. সালাউদ্দিন, আলেয়া বেগম ও আলী নেওয়াজ মিয়া। তারা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।

ভুক্তভোগীরা দাবি করেন, ডাকাতরা তাদের কাছ থেকে প্রায় অর্ধলাখ টাকা এবং ১০টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। তবে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক বিষয় হলো, তারা মৃত ব্যক্তির মরদেহের ওপরও আঘাত করে। নিহত ছবদর আলীর ছেলে আলমগীর মিয়া বলেন, “টাকা-পয়সা গেছে, তাতে কিছু বলার নাই। কিন্তু আমার বাবার লাশের ওপর হাত দিয়েছে—এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। এটা আমাদের মনকে ভেঙে দিয়েছে।”

এই ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে। অনেকেই এই বর্বর ঘটনার দ্রুত বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

ওসি খায়রুল আলম বলেন, ঘটনার সময় পুলিশের একটি টহল দল রাত ১০টা পর্যন্ত ওই এলাকায় ছিল। এরপর তারা অন্যান্য স্থানে টহলে চলে যায়। তিনি জানান, পুলিশের একাধিক দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে।

এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, যদি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সও নিরাপদ না হয়, তবে সাধারণ মানুষ কীভাবে নিরাপত্তা আশা করবে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন মানবিক ও জঘন্য অপরাধ শুধু আইনশৃঙ্খলার অবনতিই নয়, সমাজে এক গভীর নৈতিক সংকটেরও প্রতিচ্ছবি। দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের গ্রেপ্তার না করা হলে এর প্রভাব হতে পারে ভয়াবহ।

 

Leave a Reply

scroll to top