চিকিৎসাসেবার পরিবেশকে নিরাপদ রাখতে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। পাশাপাশি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে জনগণের যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো যেন মিথ্যা প্রমাণিত হয় সে প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেছেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত দুই দিনব্যাপী (১২-১৩ মে) সিভিল সার্জন সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “চিকিৎসা পেশা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত সম্মানজনক। কিন্তু জনমনে অভিযোগ রয়েছে যে, অনেক সরকারি চিকিৎসক হাসপাতালে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত থাকেন না। এমনকি অনেক উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে রোগীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এই অনুপস্থিতি স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলে।”
নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে সরকার সচেষ্ট
চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও সরকার কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর এবং চিকিৎসকদের হুমকির মতো ঘটনাগুলো উদ্বেগজনক। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের সঙ্গে সিভিল সার্জনদের সমন্বয় আরও জোরদার করতে হবে।” তিনি সিভিল সার্জনদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা সমাজের মেধাবী শ্রেণির প্রতিনিধি। স্বাস্থ্যখাতে জেলা পর্যায়ে আপনারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, আপনাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত মানুষের জীবনকে ছুঁয়ে যায়।”
সেবাকে জনমুখী করতে প্রস্তাবনা
উপদেষ্টা স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনাও উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে ছিল:
- পোস্টমর্টেম সেবা থানায় নিয়ে যাওয়া
- ধর্ষণ মামলায় নারী ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা, না থাকলে নারী সেবিকার উপস্থিতিতে পুরুষ ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা
- মানহীন ও শিক্ষকশূন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বন্ধ
- মেডিকেল কলেজে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন
- ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ৬ মাস শহরে ও ৬ মাস গ্রামে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং গ্রামে অবস্থানের সময় সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি
তিনি বলেন, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে জনগণ দ্রুত ও মানসম্পন্ন সেবা পাবে এবং জনদুর্ভোগ কমবে।
মাদকবিরোধী লড়াইয়ে চিকিৎসকদের সম্পৃক্ততার আহ্বান
মাদক নিয়ন্ত্রণ এবং মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসকদের সক্রিয় ভূমিকা কামনা করে তিনি বলেন, “থানা বা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সঙ্গে অংশীদার হয়ে পুনর্বাসন ও কাউন্সেলিং কার্যক্রমকে ফলপ্রসূ করতে হবে।”
সিভিল সার্জনদের দাবি ও উপদেষ্টার আশ্বাস
প্রশ্নোত্তর পর্বে সিভিল সার্জনরা জেলা হাসপাতালকে কেপিআই (Key Point Installation) হিসেবে স্বীকৃতি, পুলিশ টহল বৃদ্ধিকরণ, পোস্টমর্টেম সেন্টার আধুনিকীকরণ, এবং নিরাপত্তার জন্য গানম্যান নিয়োগসহ নানা দাবি উত্থাপন করেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব দাবিকে যৌক্তিক উল্লেখ করে বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. সারোয়ার বারী প্রমুখ।