আ.লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ: জাবি ও রাবিতে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

New-Project-3-4.jpg

জাবিতে আনন্দ মিছিল

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা গেছে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির নামে সহিংসতা, দমন-পীড়ন ও শিক্ষাঙ্গনে দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আসা শিক্ষার্থীরা এই ঘোষণাকে ‘গণতন্ত্রপন্থী এবং ন্যায়ের পথে এক সাহসী পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করছেন।

শনিবার (১১ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বটতলা এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন। প্রথমে তাঁরা একে অপরকে মিষ্টিমুখ করান এবং এরপর বটতলা থেকে একটি বিজয় মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বটতলায় এসে শেষ হয়। মিছিল চলাকালে শিক্ষার্থীরা স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন চারপাশ— “এই মুহূর্তে খবর এলো, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো”, “একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর”, “দালালেরা সাবধান— পালানোর পথ নেই।”

এসময় নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, “এই নিষেধাজ্ঞা শুধু আওয়ামী লীগ নয়, গোটা ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক চর্চার বিরুদ্ধে একটি ঐতিহাসিক অবস্থান। শিক্ষাঙ্গনে সহিংসতা, ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব, মতপ্রকাশের অবরোধ—সবকিছু এই এক সিদ্ধান্তেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আশা করছি, এটি একটি গণতান্ত্রিক, সহনশীল এবং মুক্তচিন্তার বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার দিকে প্রথম পদক্ষেপ।”

নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল বলেন, “আওয়ামী লীগ শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে ভয়, দমন, আর সন্ত্রাসের প্রতীক হয়ে উঠেছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু প্রয়োজন ছিল না— এটি সময়ের দাবি ছিল। এখন চাই, এর বাস্তবায়ন হোক কঠোরভাবে।”

রাবিতে মিষ্টি বিতরণ

একই রাত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) জোহা চত্বর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিজয় মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিভিন্ন আবাসিক হল ঘুরে এসে মূল ফটকে অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থীরা “ইনকিলাব জিন্দাবাদ”, “মুজিববাদ মুর্দাবাদ”, “ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর”—এমন নানা স্লোগান দেন।

সেখানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা মেহেদী সজীব। তিনি বলেন, “আজ আমাদের বিজয়ের দিন। এই সিদ্ধান্ত যদি সময়মতো কার্যকর না হয়, তাহলে ইতিহাস ক্ষমা করবে না। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যেই বিচার সম্পন্ন করতে হবে, যেন এটি ৩১ দিনে গড়ায় না।”

রাবিতে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

রাবি শিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, “আওয়ামী লীগ গত ১৭ বছরে যেভাবে ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠা করেছে, তা রাজনীতি নয়, বর্বরতা। আজকের নিষেধাজ্ঞা সঠিক সিদ্ধান্ত। যেসব দালাল এখনো ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে, তাদেরকেও দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। এমনকি যেসব শিক্ষক আওয়ামী মতাদর্শে শিক্ষাঙ্গন কলুষিত করেছেন, তাঁদের প্রতিও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।”

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই মিছিল শেষে একে অপরকে মিষ্টিমুখ করিয়ে বিজয়ের অনুভূতি ভাগ করে নেন। তাঁদের আশা—এই নিষেধাজ্ঞা শুধু অস্থায়ী পদক্ষেপ না হয়ে একটি স্থায়ী পরিবর্তনের সূচনা ঘটাবে।

Leave a Reply

scroll to top