নতুন যুগে পা রাখার প্রত্যয় নিয়ে ২০২৫ সালের শুরুতে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। কিন্তু সময় যতই গড়াচ্ছে, ততই যেন সেই স্বপ্নের মিছিল রূপ নিচ্ছে হতাশার দীর্ঘ স্রোতে। একসময় যাদের ব্যাটে-বলে জ্বলে উঠত সাহসী প্রতিরোধ, এখন সেই দলই বারবার ধসে পড়ছে চাপের কাছে, ছন্দহীনতায়। আরব আমিরাতের বিপক্ষে অপ্রত্যাশিত সিরিজ হার, এরপর পাকিস্তানের মাটিতে লজ্জাজনক ভঙ্গিমায় টানা তিন ম্যাচে পরাজয়—সব মিলিয়ে টাইগারদের অবস্থা এখন প্রশ্নবিদ্ধ আত্মবিশ্বাসের করুণ প্রতিচ্ছবি। পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজের প্রথম তিনটি ম্যাচেই পরাজিত হয়ে সিরিজ হাতছাড়া করেছে টাইগাররা।
পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি: ব্যাটিং-বোলিং ব্যর্থতায় বড় হার
৩০ মে, ২০২৫ তারিখে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তান নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২০১ রান সংগ্রহ করে। দলের হয়ে শাহিবজাদা ফারহান ৪১ বলে ৭৪ রান করেন, মোহাম্মদ হারিস ২৫ বলে ৪১ রান এবং হাসান নাওয়াজ অপরাজিত ৫০ রান করেন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ দল ১৪৪ রানে অলআউট হয়ে যায়, ফলে ৫৭ রানের বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়। তানজিদ হাসান ১৯ বলে ৩৩ রান করেন, তবে এরপর ব্যাটিং লাইনআপ ধসে পড়ে। শেষদিকে মেহেদী হাসান মিরাজ ২৩ রান এবং তানজিম হাসান সাকিব ৩১ বলে ৫০ রান করে হারের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করেন।
সিরিজের প্রেক্ষাপট: প্রস্তুতির ঘাটতি ও ধারাবাহিক ব্যর্থতা
এই সিরিজটি মূলত ২০২৫ সালের এশিয়া কাপ ও ২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়। প্রথমে তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের পরিকল্পনা থাকলেও, উভয় বোর্ডের সম্মতিতে ওয়ানডেগুলো বাদ দিয়ে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে রূপান্তর করা হয়।
এর আগে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয় বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে পারভেজ হোসেন ইমনের শতকে জয় পেলেও, পরবর্তী দুই ম্যাচে ব্যর্থতা দেখা দেয়। এটি ছিল আমিরাতের প্রথমবারের মতো কোনো পূর্ণ সদস্য দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়।
সামনের চ্যালেঞ্জ: আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া
একটা সময় এই দলটাই উপমহাদেশের শীর্ষ শক্তিদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছে। অথচ এখন ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে গিয়ে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং—সব বিভাগেই যেন ছায়া হয়ে গেছে এক সময়ের আক্রমণাত্মক বাংলাদেশ। হারের বেদনায় হতাশ সমর্থক, নীরব ডাগআউট, অনুজ্জ্বল অধিনায়কত্ব—এই ছবিই যেন বারবার ফিরে আসছে সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোয়।
টানা দুই সিরিজে পরাজয়ের ফলে বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেছে। বিশেষ করে ব্যাটিং লাইনআপের ধারাবাহিক ব্যর্থতা ও বোলিংয়ে কার্যকারিতা না থাকায় দলকে ভুগতে হচ্ছে। আগামী ম্যাচগুলোতে দলকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে ব্যাটিং-বোলিং উভয় বিভাগেই উন্নতি আনতে হবে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ও পঞ্চম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ যথাক্রমে ১ ও ৩ জুন লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। এই ম্যাচগুলোতে জয় পেতে পারলে দল কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে পারে।