শেয়ার বাজারে কারসাজি করে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে জাতীয় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (১৭ জুন) কমিশনের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরিকল্পিতভাবে শেয়ার বাজারে ‘ফটকা ব্যবসার’ কৌশল প্রয়োগ করে দাম বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়েছেন এবং ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন। এসব লেনদেনকে ‘অসাধু, প্রতারণাপূর্ণ ও অবৈধ’ বলে উল্লেখ করেছে দুদক।
অভিযুক্তদের তালিকায় কে রয়েছেন?
দুদকের মামলায় যেসব ব্যক্তি অভিযুক্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে সাকিব ছাড়াও রয়েছেন সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক আবুল খায়ের ওরফে হিরু এবং তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাদবর ও তার স্ত্রী কনিকা আফরোজ, মোহাম্মদ বাশার, সাজেদ মাদবর, আলেয়া বেগম, কাজি ফুয়াদ হাসান, কাজি ফরিদ হাসান, শিরিন আক্তার, জাভেদ এ মতিন, মো. জাহেদ কামাল, মো. হুমায়ূন কবির এবং তানভীর নিজাম।
দুদক বলছে, এই চক্রটি শেয়ার বাজারে পরস্পর যোগসাজশে ‘সিরিজ ট্রানজেকশন’, ‘অ্যাক্টিভ ট্রেডিং’, ‘গামব্লিং’ এবং ‘স্পেকুলেশনের’ মতো পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট কিছু শেয়ারের কৃত্রিম দাম বৃদ্ধি করেছে। এর ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হয়েছেন এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
শুধু শেয়ার বাজার থেকেই নয়, অভিযুক্তরা কৃত্রিমভাবে অর্জিত এই অর্থকে বিভিন্ন চ্যানেলে ‘লেয়ারিং’ করে বৈধ অর্থের আড়ালে স্থানান্তর করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয় মামলায়। তদন্তে দেখা গেছে, আসামি আবুল খায়ের ওরফে হিরুর ১৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিকভাবে ৫৪২ কোটি ৩১ লাখ টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।
এদের মধ্যে হিরু ও তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের সহায়তায় অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থের ২৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকারও বেশি ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন’ লঙ্ঘন করে বিভিন্ন খাতে সরানো হয়েছে। এসব লেনদেনের কোনো বৈধ উৎস প্রমাণ করতে পারেননি অভিযুক্তরা।
মামলাটি দায়ের হয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ১৭ ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধিত ২০১৫) এর ৪(২), ৪(৩), ৪(৪) ধারা এবং দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী।
দুদকের ভাষ্য অনুযায়ী, তদন্তে প্রতিটি লেনদেন, সংশ্লিষ্ট বিও অ্যাকাউন্ট, এবং শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির ‘ট্রেইল’ যাচাই করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে, আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র হিসেবে কাজ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়ে নিজেদের জন্য বিপুল লাভের পথ তৈরি করেছেন।