আড্ডা, ইতিহাস আর অর্থনীতির এক চুমুক—আজ বিশ্ব চা দিবস

New-Project-37-3.jpg

আজ বিশ্ব চা দিবস

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

চায়ের কাপে শুধু উষ্ণ পানীয় নয়, মিশে থাকে একেকজনের সকাল, বিকেল, আড্ডা আর আরাম। শহর থেকে গ্রাম, কর্মব্যস্ততা থেকে অবসর—চা যেন এক অনন্য বন্ধন, যা মানুষকে মুহূর্তেই সংযোগ করিয়ে দেয় এক অভিন্ন আস্বাদনে। আর এই চায়ের প্রতি সম্মান জানাতেই প্রতিবছর ২১ মে পালন করা হয় বিশ্ব চা দিবস (International Tea Day)।

চায়ের ইতিহাস যতটা দীর্ঘ, এর সাংস্কৃতিক প্রভাব ততটাই বিস্তৃত। চীন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, কেনিয়া—বিশ্বের নানা দেশে চা উৎপাদনের সাথে সাথে এটি হয়ে উঠেছে জাতীয় পরিচয়ের অংশ। জাতিসংঘ ২০১৯ সালে ২১ মে-কে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব চা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, যার লক্ষ্য ছিল উৎপাদকদের শ্রম ও ভূমিকা স্বীকৃতি দেওয়া এবং চা শিল্পে ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশের চা—সবুজ পাহাড়ের সুবাস

বাংলাদেশে চা শুধু একটি পানীয় নয়, এটি একটি অর্থনৈতিক ও ঐতিহাসিক পরিচয়। সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকাগুলোয় শতবর্ষ পুরনো চা বাগান এখনো টিকে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৭০টি চা বাগান রয়েছে, যেখানে প্রায় ১ লক্ষাধিক মানুষ কাজ করেন।

২০২৪ সালে বাংলাদেশ প্রায় ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদন করেছে, যার বেশিরভাগই অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে সম্প্রতি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ‘বাংলাদেশি স্পেশাল টি’ রপ্তানি বাড়ছে।

চা শুধু পানীয় নয়, সংস্কৃতির অনুষঙ্গ

চায়ের সঙ্গে আমাদের আড্ডার সম্পর্ক আজন্ম। অফিসের বিরতি হোক কিংবা বন্ধুদের আড্ডা, বাসার অতিথি আপ্যায়ন হোক কিংবা রেলস্টেশনের এক কাপ গরম চা—সবখানেই চা যেন ঘরের মতো আপন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চায়ের ভিন্নধর্মী সংস্কৃতিও গড়ে উঠেছে—সাতরঙা চা, মশলা চা কিংবা লাল চা এখন কেবল স্বাদ নয়, পরিচয়ও বটে।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চায়ের গুরুত্ব

বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৬০০ কোটি কেজির বেশি চা উৎপাদন হয়, যার বেশিরভাগই আসে চীন ও ভারতের কাছ থেকে। চা খাত শুধু অর্থনীতিতে অবদানই রাখে না, বরং এটি টেকসই কৃষি চর্চার দিকেও ইঙ্গিত দেয়। এই শিল্পে কোটি কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, বিশেষ করে নারীদের অংশগ্রহণ এখানে উল্লেখযোগ্য।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এ বছর চা দিবসের প্রতিপাদ্য ঘোষণা করেছে—”Tea and Climate Resilience”, অর্থাৎ জলবায়ু সহনশীল চা চাষের দিকে নজর দেওয়া।

একটি চায়ের কাপে টেকসই ভবিষ্যতের স্বপ্ন

আজকের দিনে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে—চা কেবল পানের জন্য নয়, এটি হতে পারে জীবন ও জীবিকার সেতুবন্ধন। পরিবেশবান্ধব ও ন্যায্য বণ্টননির্ভর চা শিল্প গড়ে তুলতে পারলেই এই ছোট কাপে লুকিয়ে থাকবে একটি বড় ভবিষ্যৎ।

তাই আজকের এই বিশ্ব চা দিবসে আসুন, এক কাপ চা হাতে নিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাই সেই সব চা শ্রমিক, কৃষক, উদ্যোক্তা ও পরিবেশসচেতন মানুষদের, যারা প্রতিদিন আমাদের মুখে এনে দেন শান্তির এক চুমুক।

Leave a Reply

scroll to top