৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, একে একে বেড়িয়ে আসছে অনেক অজানা গোপন তথ্য। এসব অজানা তথ্যের মধ্যে একটি ‘ভারতের মদদে বাংলাদেশের চিনিকলগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল তথকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদেশের দেশের পাটশিল্প ধ্বংসের পর ভারতের নজরে পড়ে চিনিশিল্পের দিকে, মুলত ভারতের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তাদের পরামর্শে একে একে বন্ধ করা হয় রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো। এর ফলে বাংলাদেশ চিনি আমদানির ক্ষেত্রে অনেকাংশেই ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, যা ভারতের দাম্ভিক মনোভাবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় লোকসানের অজুহাতে ৬টি চিনিকল বন্ধ করে দেয়া হয়। এসব চিনিকল হলো: কুষ্টিয়া চিনিকল, রংপুরের শ্যামপুর চিনিকল, দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ চিনিকল, পঞ্চগড় চিনিকল, পাবনা চিনিকল ও রংপুর চিনিকল। এর পরপরই বাংলাদেশে ভারতীয় নিম্নমানের ভেজাল চিনি প্রবাহিত হতে থাকে চোরাই পথে, যা দেশের চিনির বাজারকে সয়লাব করে তোলে। ভারতের চিনির ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠা বাংলাদেশে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশীয় চিনি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো।
হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ভারত নির্ভরশীলতা কাটানোর জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যার মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া চিনিকলগুলো চালু করার উদ্যোগও ছিল। শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ছয়টি বন্ধ চিনিকলে উৎপাদন পুনরায় চালু করার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
চলতি মাসের ১৭ ডিসেম্বর, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীনে ছয়টি চিনিকলের আখ মাড়াইয়ের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। এর পর থেকেই এসব চিনিকলে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। আদিলুর রহমান খান সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনা করেছেন এবং চিনিকলগুলোর কর্মচারী, আখচাষি এবং স্থানীয় মানুষ নতুন আশা নিয়ে কাজে নেমেছেন।
চিনিকলগুলো চালু হওয়ায় দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে এবং ভারতের হাত থেকে মুক্তি পাবে।
এদিকে, ভারতের দম্ভের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এই নতুন পদক্ষেপে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। তারা মনে করছেন, চিনি শিল্পে ভারতের আধিপত্য শিগগিরই শেষ হবে।