এমপি লীগ এর দুঃশাসন ও নিপীড়ন থেকে অবশেষে মুক্তি! আওয়ামীলীগের শাষণ আমলের দল দেশের মানুষের বুকের উপর চেপে থাকা এক পাথরের নাম এমপি লীগ। এমপি লীগ শুধু এ দেশের মানুষের উপরে অত্যাচার নির্যাতন করেনি এমনটা নয়। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাও তাদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পায়নি দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে। নিজ আত্মীয় স্বজন ছাড়া তাদের আর কোন আপন ছিলো না।
নিজের পকেট বড় করা, কালো টাকা, টেন্ডাবাজী, চাদাবাজী ও আত্মীয়লীগ করা ছিলো তাদের কাজ। গ্রামের হাট বাজার ইজারা দেয়ার টাকাতেও তারা ভাগ বসাতো বলে স্থানীয়দের অভিযোগের শেষ নেই। এর মাধ্যমে ফুলে ফেপে উঠে দেশ বিদেশে অঢেল সম্পত্তি করেছে আওয়ামীলীগের এমপি মন্ত্রীরা।
সাধারণ মানুষের দাবি আওয়ামীলীগের সিনিয়র কয়েকজন নেতাসহ ২০/২৫ জন সাবেক এমপি ছাড়া বাকী সবাই দূর্নীতিতে জড়িয়ে পরেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে। এমপি লীগ বিতারিত হওয়ার পর একই কায়দায় লুটপাট চলছে। তবে জনগণের প্রশ্ন আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবে তারাও কি একই রাস্তায় চলবে?
বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে এর সাথে জাড়িয়ে আছে আওয়ামীলীগের নাম। ঐতিহ্য নিয়ে বেড়ে উঠা দলটিতে এক সময় দুর্বৃত্ত, দখলবাজ ও ব্যবসায়ীদের আর্বিভাব হয়। ধীরে ধীরে এসব দুর্বৃত্তরা জায়গা করে নেয় আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ সব পদে। গাতানুগতিক প্রক্রিয়ায় ছাত্ররাজনীতিতে বেড়ে উঠা নেতাদের জায়গা না দিয়ে এসব লোকেরা জায়গা নিয়ে নেয় দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের প্ররোচনায়।
তারাই আবার ক্ষমতা পাওয়ার পর জনগনের পাশে না দাড়িয়ে, যোগ্যদের জন্য জায়গা তৈরি না করে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তৈরি করে এমপি লীগ।
এমপিলীগের কাজই ছিলো লুটপাট, চাঁদাবাজি ও অমত পোষণকারীদের সর্বোচ্চো অপশক্তি দিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া। তাদেরর মধ্যেই একজন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও আইন প্রতিমন্ত্রী এবং ঢাকা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. কামরুল ইসলাম। সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামরুল নিজের নামে এবং স্ত্রী-সন্তানদের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির মাধ্যমে ব্রাজিল থেকে নিম্নমানের গম ক্রয় করে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রচুর আয়-বর্হিভত সম্পদের মালিক হয়েছেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী। বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ গঠন করেছে দুদক। সংস্থাটির অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ সঠিক প্রমাণিত হওয়ায় তার দুর্নীতির প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
এমপিলীগের আরেক সক্রিয় সদস্য হলেন চট্টগ্রাম-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মাহফুজুর রহমান মিতা। গত কয়েক বছরে মিতা ও তার স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে প্রায় ১৯০ থেকে ১৯৯ গুণ। ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। একই অভিযোগ কুমিল্লা-৮ আসনের সাবেক এমপি নাসিমুল আলম চৌধুরী নজরুল এর বিরুদ্ধে।
দুদকের তদন্তের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে। এমপি আবদুল্লাহ-আল-ইসলাম জ্যাকব, এমপি মনসুরের শত কোটি
টাকার নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে একাধিক জাতীয় দৈনিক। জ্যাকব ইফতি ইটসিএল লিমিটেড এর নামে এলজিআরডির শত শত
কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে লুটপাট করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এলাকায় নিয়োগ বাণিজ্য করেই শতকোটি টাকা কামানোর অভিযোগ আছে রাজশাহী-৫ আসনের আওয়ামীলীগের দলীয় সাবেক এমপি ডা. মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে। নিয়োগ বাণিজ্য এবং অর্থ পাচারসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এমনই অভিযোগ কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-তিতাস) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া ও তার ছেলে দাউদকান্দি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে তাদের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু দুদক।
এদিকে বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরাতে জোরালো উদ্যোগ নিয়েছে অন্তব্যর্তীকালীন সরকার। ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরাতে সহায়তা চায়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট, বিএফআইইউ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থসম্পদ সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন দেশে চিঠি দেওয়া শুরু করেছে।
এখন পর্যন্ত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী সাবেক ৮ মন্ত্রী, ৯ সংসদসদস্য (এমপি) এবং তাদের স্ত্রী, সন্তান ও সহযোগীদের নামে জমা করা অর্থসম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৫টি বড় ব্যবসায়িক গ্রুপের নামে বিদেশে থাকা অর্থসম্পদের তথ্যও চাওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক নেতা, ব্যাংকার, আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী-তাদের গ্রুপের নামও আছে অর্থসম্পদের তথ্য চাওয়ার তালিকায়।
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার করা অর্থের বড় অংশই যাচ্ছে সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, কানাডা, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ আরও কিছু দেশে। এদিকে, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক ডাক-টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ। বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং বেক্সিমকো গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামেও বিদেশে থাকা অর্থের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
সাবেক সংসদ-সদস্যদের মধ্যে আরও আছেন জামালপুর-৩ আসনের মির্জা আজম, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের জান্নাত আরা হেনরী, ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, নাটোর-২ আসনের শফিকুল ইসলাম শিমুল ও পিরোজপুর-১ আসনের মহিউদ্দিন মহারাজ। সাবেক সংসদ সদস্যদের প্রত্যেকের স্ত্রী, সন্তান, স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থসম্পদের তথ্যও চাওয়া হয়েছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের দাবি এমিপিদের দূর্নীতি রোধে প্রয়োজন সরকার ও জনগণের সমন্বিত পদক্ষেপ। তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন সংবিধান সংস্কার
করে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠন করা, যাতে এক ব্যক্তির করা আইন এবং ক্ষমতা দিয়ে অন্য জনের অধিকার লুট করা না হয় এবং তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন দূর্নীতি দমন কমিশনকে নখ ও দন্তহীন বাঘ থেকে প্রকৃত দূর্নীতি প্রতিরোধে বাঘ হিসেবে কার্যকর করা।