ইরানে ইসরায়েলি হামলার পেছনে আসল কারণ কী?

New-Project-3.jpg
২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘর্ষে উভয় পক্ষের হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ইরানি প্রতিক্রিয়ার তীব্রতা সত্ত্বেও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দৃঢ়ভাবে বলছে, ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা ছিল ‘প্রয়োজনীয়’।
তবে বাস্তবে, কেন ইসরায়েল এমন একতরফা, বিনা উসকানিতে আক্রমণ চালালো—তার প্রকৃত ব্যাখ্যা কোথাও নেই।

ইসরায়েলি সরকার জনগণকে বোঝাতে বলছে, এটি একটি ‘প্রতিরোধমূলক’ হামলা, যার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির সম্ভাব্য হুমকি প্রতিহত করা হয়েছে। কিন্তু এমন দাবি প্রমাণ করতে কোনও বাস্তবপক্ষে টেকসই উপাত্ত নেই।
১২ জুন আইএইএ’র প্রতিবেদনেও এমন কিছু উল্লেখ নেই যা পূর্বে জানা ছিল না। তা সত্ত্বেও, ইসরায়েল এটিকে জরুরি নিরাপত্তা পরিস্থিতি হিসেবে দেখাতে চাইছে।

হামলার ‘আসল’ লক্ষ্যবস্তু কী ছিল?

যদিও সরকারিভাবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘শিরচ্ছেদ’ করার কথা বলা হচ্ছে, বাস্তবে তা করা সম্ভব নয়—এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা।
ইসরায়েলি বিমান হামলার লক্ষ্য ছিল ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র এবং সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনিক ভবন। এছাড়াও সিনিয়র সামরিক নেতা ও সরকারি উপদেষ্টাদের লক্ষ্য করে একাধিক হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—ইরানের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা আলী শামখানি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনার অন্যতম মুখ ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ড শুধু আলোচনাকে ব্যাহত করতেই নয়, বরং ইসরায়েলি কৌশলগত শক্তি প্রদর্শনের অংশ বলেও মনে করা হচ্ছে।

তৃতীয় একটি বিশ্লেষণ বলছে—ইসরায়েল ইরানে শাসন পরিবর্তনের লক্ষ্যে এগোচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু খোলাখুলি বলেছেন, ইরানিদের উচিত ‘একটি মন্দ ও দমনকারী শাসন থেকে মুক্তি’ নেওয়া।

এই বক্তব্যে গাজায় ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রাখার মতো কৌশলের প্রতিফলন পাওয়া যায়—যেখানে ধারণা ছিল, ক্ষুধায় অতিষ্ঠ হয়ে ফিলিস্তিনিরা হামাসকে ক্ষমতা থেকে সরাবে। একই কৌশল ইরানেও প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে ইসরায়েল। কিন্তু বাস্তবে, ইরানিদের মধ্যে গভীর দেশপ্রেম বিরাজ করে, এবং তারা বিদেশি হামলার বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক মতাদর্শকে একত্রিত করে।

ওরি গোল্ডবার্গের মতে, ইসরায়েলের এই হামলার পেছনে রয়েছে একাধিক কৌশলগত ও রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ: গাজায় গণহত্যার দায় এড়ানো: আন্তর্জাতিক চাপ, যুদ্ধবিরোধী মনোভাব, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সম্ভাব্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা—এসব কিছু থেকে দৃষ্টি সরাতে নেতানিয়াহু একটি বহিঃমুখী শত্রু চিত্র নির্মাণে ব্যস্ত।

আন্তর্জাতিক মনোযোগ ঘোরানো: গাজায় ইসরায়েলি দখলদারত্ব ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় দেশগুলো সরব হয়ে উঠেছে। এই হামলা একপ্রকার ‘স্ট্র্যাটেজিক ডাইভারশন’। দায়মুক্তির সংস্কৃতি রক্ষা: ইসরায়েল বহুদিন ধরে বিশ্বে কার্যত দায়মুক্তি ভোগ করছে—যে কিছু করলেই কেউ কিছু বলে না। নেতানিয়াহু চাচ্ছেন সেই ‘স্থিতাবস্থা’ ফেরাতে।

গোল্ডবার্গ ব্যাখ্যা করেন, ইসরায়েলের কাছে ‘নিরাপত্তা’ মানে শুধু আত্মরক্ষা নয়—বরং এমন এক অবস্থান, যেখানে তারা যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে হত্যা করতে পারবে এবং এর জন্য কোনও জবাবদিহি থাকবে না। এই দর্শন থেকেই গাজা, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং এখন ইরান পর্যন্ত অভিযান বিস্তৃত হয়েছে।

নেতানিয়াহু হয়তো নিজেকে আইসিসি বা আন্তর্জাতিক আদালতের হাত থেকে রক্ষা করতে চান। কিন্তু তার এই কৌশল আদৌ সফল হবে কিনা, কিংবা ইসরায়েলি জনগণ তাকে এইসব ব্যর্থতা ও অপরাধের জন্য ক্ষমা করবে কিনা—তা সময়ই বলবে।

বিশ্লেষকের মতে, একজন ব্যক্তি হিসেবে নেতানিয়াহুর কৌশল হয়তো কার্যকর, কিন্তু ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় কাঠামো গঠনে এই আচরণ একটি অশনি সংকেত।

আল জাজিরা-নির্ভর এই মূলসূত্রভিত্তিক প্রতিবেদন

Leave a Reply

scroll to top