ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান তীব্র উত্তেজনা নিরসনে এবার সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গতকাল শুক্রবার (১৩ জুন) তিনি পৃথকভাবে ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে রাশিয়া মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত বলে উভয় পক্ষকে জানিয়েছেন তিনি।
ক্রেমলিন প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানকে ফোন করে ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন। পুতিন স্পষ্ট করে বলেন, ইসরায়েলের এই আক্রমণ জাতিসংঘ সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এসময় তিনি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং ইরানের সার্বভৌমত্বের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। এই ফোনালাপে দুই নেতার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়।
একই দিনে পুতিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেন। এই আলোচনায় পুতিন মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা যেন আর না বাড়ে, সে বিষয়ে ইসরায়েলকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানান।
পুতিনের ভাষ্য, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব, বিশেষ করে পরমাণু প্রকল্প এবং সামরিক ইস্যুগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। তিনি নেতানিয়াহুকে আশ্বস্ত করেন যে, এই সংকট নিরসনে রাশিয়া একটি বিশ্বাসযোগ্য মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালনে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
উল্লেখ্য, ১২ জুন রাত থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে ইরানে হামলা শুরু করে। রাজধানী তেহরানসহ একাধিক সামরিক ঘাঁটি, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র এবং আবাসিক ভবনে হামলা চালানো হয়।
এই হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি, খাতাম আল-আনবিয়া সদরদপ্তরের কমান্ডার মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদ, ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানীসহ অন্তত ৭৮ জন নিহত হন। হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এর প্রতিশোধ হিসেবে শুক্রবার রাতে ইরান ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ চালায়। এই মিসাইল হামলার মুখে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তার নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান এবং উচ্চপদস্থ মন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে রাজধানী তেল আবিবের একটি সুরক্ষিত বাংকারে আশ্রয় নেন। দুই দেশের মধ্যে এই পাল্টাপাল্টি হামলা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে পুতিনের মধ্যস্থতার প্রস্তাব আন্তর্জাতিক মহলে স্বস্তি এনেছে।