১৬ বছর পর ফিরছে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা

New-Project-21-1.jpg

১৬ বছর পর ফিরছে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

দীর্ঘ ১৬ বছর পর আবারও চালু হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি পরীক্ষা। চলতি বছরের ডিসেম্বরেই এ পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে পরীক্ষার জন্য একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। চলছে নীতিমালা পর্যালোচনার কাজ। সব ঠিক থাকলে ঈদের পর তা প্রকাশ করা হবে।

২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসিই) চালু হওয়ার পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় পুরনো সেই বৃত্তি পরীক্ষা। ফলে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক মহলে পরীক্ষাটি ফেরানোর দাবি উঠছিল। অবশেষে অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়।

নীতি পরিবর্তনে প্রস্তুতি, বাড়ছে অংশগ্রহণের হার ও বৃত্তির অর্থ

খসড়া নীতিমালায় আগের নিয়মে কিছু সংশোধন এনে সময়োপযোগী করা হয়েছে। আগে প্রতি বিদ্যালয় থেকে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারতো। এবার সেই হার ২৫ শতাংশে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী পড়ছে। সেই হিসাবে এবার প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তির আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা আগের চেয়ে প্রায় ১৮ হাজার বেশি।

বৃত্তির অর্থও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০০৯ সালের নিয়ম অনুযায়ী, ট্যালেন্টপুল বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা পেতো ৩০০ টাকা এবং সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্তরা পেতো ২২৫ টাকা করে মাসিক ভাতা। এবার তা দ্বিগুণ করে যথাক্রমে ৬০০ ও ৪৫০ টাকা করার সুপারিশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

বেসরকারি বিদ্যালয়ের অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা

আগের নিয়মে শুধুমাত্র সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারতো। এবার বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও যুক্ত করার আলোচনা চলছে। যদিও এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মাঝে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা ও উদ্বেগ।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, এই পরীক্ষা কেবল সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য রাখলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ধরে রাখা সহজ হবে। তারা চাইছেন, শুধু সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যই বৃত্তি পরীক্ষার সুযোগ থাকুক।

বৃত্তি পরীক্ষার বিরোধিতা শিক্ষাবিদ ও উন্নয়নকর্মীদের

বৃত্তি পরীক্ষার বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন একাংশ শিক্ষাবিদ ও এনজিওকর্মীরা। তাদের মতে, এই পরীক্ষা শিশুদের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি করে এবং সমতাভিত্তিক শিক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বেছে নেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকদের অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়া হয়, ফলে বাকি শিক্ষার্থীরা উপেক্ষিত থেকে যায়।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদ বলেন, “বৃত্তি পরীক্ষার শিক্ষার মান বাড়ানোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং এটি শিশুদের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।”

এ মতের সঙ্গে একমত গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, “বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে দরিদ্র পরিবারগুলোর সন্তানদের নিরুৎসাহিত করা হয়। কারণ তাদের প্রাইভেট বা কোচিং করানো সম্ভব হয় না।”

তারা দাবি করেছেন, দরিদ্রতা ও এলাকার ভিত্তিতে উপবৃত্তির ব্যবস্থা জোরদার করাই হবে অধিক কার্যকর ও সমতামূলক পদক্ষেপ।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে যেকোন সময়

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জানিয়েছেন, ডিসেম্বরেই বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। খসড়া নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, তবে সেটি এখনো চূড়ান্ত নয়। সবকিছু ঠিক থাকলে ঈদের পর নীতিমালা প্রকাশ করে পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু হবে।

তিনি বলেন, “যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নীতিমালায় কিছু সংশোধন করা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত রূপেই জানা যাবে—কী থাকবে আর কী বাদ যাবে। তবে পরীক্ষা যে হবে, সেটা নিশ্চিত।”

এভাবে ১৬ বছর পর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা আবারও শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন প্রতিযোগিতার দ্বার খুলতে যাচ্ছে—যা একদিকে যেমন আনন্দের, অন্যদিকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও সামনে এনেছে।

Leave a Reply

scroll to top