হাওরের স্বচ্ছ জলে মুগ্ধ পর্যটক, কিশোরগঞ্জে বাড়ছে পর্যটনচিত্র

কিশোরগঞ্জ
২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ অনন্য খান সাদিক, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জের মিঠামইন ও বালিখলা হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করছেন হাজারো পর্যটক। ঈদের ছুটি এবং বর্ষার আগমনী স্রোতে জলমগ্ন হাওরের স্বচ্ছ পানির দৃশ্য যেন এক স্বর্গীয় অভিজ্ঞতা এনে দিয়েছে পর্যটকদের জন্য। প্রখর গরমকেও উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ছুটে আসছেন এই হাওর অঞ্চলে।

গত মঙ্গলবার (১০ জুন) সরেজমিনে বালিখলা ও মিঠামইন এলাকায় দেখা যায়, পর্যটকদের প্রাণবন্ত ভিড়। অনেকে পরিবার নিয়ে, আবার কেউ বন্ধুবান্ধব মিলে বেড়াতে এসেছেন। বর্ষার পানি বাড়তে থাকায় হাওরের সৌন্দর্য আরও নবরূপে ধরা দিয়েছে। স্থানীয় মাঝি, দোকানি, হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে, কারণ পর্যটকদের আগমনে জমে উঠেছে তাদের ব্যবসা।

পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে মিঠামইন-নিকলী বেড়িবাঁধ এলাকা। ২০২০ সালে এই বেড়িবাঁধ নির্মাণের পর থেকে এটি ধীরে ধীরে দর্শনার্থীদের প্রধান গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে ছুটে আসে। ছাতিরচর এলাকায় ভাঙন রোধে রোপণ করা হয়েছে হাজার হাজার করচগাছ, যা হাওরের পরিবেশকে আরও শোভাময় করে তুলেছে।

স্থানীয় মাঝি সুমন মিয়া জানান, বর্ষা এলেই তাদের জীবিকা সচল হয়। “সারা বছর আমরা এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি,” বলেন তিনি। পর্যটকদের ঘুরিয়ে বেড়ানোই এখন তাদের মূল জীবিকা। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে হাওরের পানি বাড়ছে, ফলে নৌভ্রমণের চাহিদাও বাড়ছে বলে জানান তিনি।

নরসিংদী থেকে আসা পর্যটক হাসানুল শুভ জানান, ঈদের ছুটিকে ঘিরে তারা ২০ জন বন্ধু ১০টি বাইকে চেপে এসেছেন হাওর দেখতে। “নতুন পানি এসেছে হাওরে, ট্রলারে ঘুরেছি, অসাধারণ লেগেছে পরিবেশ,” বলেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, বর্ষাকালে এই অঞ্চলে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ পর্যটনকেন্দ্রিক আয়-রোজগারে যুক্ত থাকেন। ফলে পর্যটকদের উপস্থিতি শুধু বিনোদন নয়, বরং অনেকের জীবিকার উৎসও বটে। হাওরের সৌন্দর্য রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো সজাগ দৃষ্টি রাখছে বলেও জানান তারা।

মিঠামইন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, ঈদের পর থেকেই হাওরে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় জিরো পয়েন্ট এলাকায় পোশাকধারী ও সিভিল পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া হাওরের পথে দুটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে যাতে দর্শনার্থীরা নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারেন।

হাওরের জলে যখন প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি পড়ে, তখন যেন মানুষ নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়—কিশোরগঞ্জের হাওর আজ শুধুই আর জলাভূমি নয়, এটি হয়ে উঠেছে স্বস্তির এক নৈসর্গিক ঠিকানা।

Leave a Reply

scroll to top