বরগুনায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে একদিনে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১১ জুন) বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকার বাসিন্দা ৭৫ বছর বয়সী চান মিয়া এবং পৌরসভার থানাপাড়া এলাকার ৭০ বছর বয়সী গোসাই দাসের মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম।
চান মিয়াকে তিন দিন আগে জ্বর ও দুর্বলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার ডেঙ্গু পজিটিভ শনাক্ত হয় এবং তাকে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। একপর্যায়ে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতির মধ্যেই বুধবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়। তার মেয়ে কুলসুম জানান, সকালে তার বাবার প্লাটিলেট কাউন্ট ছিল ৬৪ হাজার, কিন্তু দুপুরে হঠাৎ করেই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।
অন্যদিকে, গোসাই দাসকে অসুস্থ অবস্থায় গত রোববার বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে বুধবার সকালে প্লাটিলেট পরীক্ষার জন্য তাকে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা শেষে ফের হাসপাতালে নেওয়ার সময় হঠাৎ করে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরে অক্সিজেন দেওয়া হলেও সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। তার ছেলে সঞ্জয় চন্দ্র দাস জানান, সকাল পর্যন্ত বাবার অবস্থা মোটামুটি ভালো ছিল, এমনকি তিনি খাবারও খেয়েছিলেন। কিন্তু শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার পর দ্রুত অবস্থার অবনতি ঘটে।
বরগুনা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) নতুন করে ৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ১৭২ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন, যার মধ্যে ৩১ জন শিশু। এ বছর জানুয়ারি থেকে ১১ জুন পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ১ হাজার ৫৬৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ জনে।
স্বাস্থ্যখাতে সংকটের কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে রোগীর তুলনায় চিকিৎসক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালটিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ১০ জন ডাক্তারদের মধ্যে অর্ধেকই ছুটিতে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জনবল ও যন্ত্রপাতির সংকটের কারণে সময়মতো রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা পরিস্থিতির উন্নয়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বরগুনা প্রেসক্লাবের সামনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন সামাজিক ও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নজরদারি জোরদার এবং জেলা পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে মশক নিধন অভিযান চালানোর দাবি জানান।
বরগুনা জেলার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গাতেও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, জুন-জুলাই মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।