আগামী ২৫ বছর ধরে হজযাত্রীদের আর সৌদি আরবের তীব্র গ্রীষ্মের দাবদাহ সইতে হবে না। ২০২৬ সাল থেকে শুরু করে হজ পর্যায়ক্রমে বসন্ত, শীত এবং শরৎকালের মতো তুলনামূলক শীতল আবহাওয়ায় অনুষ্ঠিত হবে, যা হজযাত্রীদের জন্য এক স্বস্তিদায়ক পরিবর্তন বয়ে আনবে। সম্প্রতি গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সৌদি আরবের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র (NCM)-এর মুখপাত্র হুসেইন আল কাতানি নিশ্চিত করেছেন, এই বছর যে হজ সম্পন্ন হলো, সেটিই ছিল গ্রীষ্মকালে অনুষ্ঠিত হওয়া শেষ হজ। তার মতে, আগামী আট বছর হজ বসন্তকালে অনুষ্ঠিত হবে। এরপরের আট বছর হজ পড়বে শীতকালে। এরও পরে শরৎকাল পার করে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে প্রায় ২৫ বছর পর হজ আবার গ্রীষ্মকালে ফিরে আসবে।
এনসিএমের মুখপাত্র আরও ব্যাখ্যা করেন যে, এই ২৫ বছরের হজ পঞ্জিকাটি মূলত চন্দ্রবর্ষের হিসাব ধরে করা হয়েছে। ইসলামিক বা হিজরি বর্ষপঞ্জি চাঁদের গতিপথের ওপর নির্ভরশীল, যা গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির তুলনায় প্রায় ১১ দিন ছোট। এই ১১ দিনের পার্থক্যের কারণেই প্রতিবছর হজের সময় কিছুটা করে এগিয়ে আসে। এই প্রাকৃতিক নিয়মের কারণেই ২০৫০ সাল পর্যন্ত হজযাত্রীরা তুলনামূলকভাবে শীতল আবহাওয়ার সুবিধা পাবেন।
এনসিএম একটি বিস্তারিত সূচি প্রকাশ করেছে, যা ২০৫০ সাল পর্যন্ত হজের সময়কাল সম্পর্কে ধারণা দেয়। ২০২৬ থেকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত: এই সময়কালে হজ বসন্তকালে (মে থেকে মার্চ) অনুষ্ঠিত হবে। ২০৩৪ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত: হজ শীতকালে (ফেব্রুয়ারি থেকে জানুয়ারি, পরে ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে। ২০৪২ থেকে ২০৪৯ সাল পর্যন্ত: এই আট বছর হজ শরৎকালে (নভেম্বর থেকে সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে। ২০৫০ সালে: হজ আবার আগস্ট মাসে, অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে ফিরে আসবে।
হজের সময়ের এই পরিবর্তনটি হজযাত্রীদের জন্য একটি বড় সুফল বয়ে আনবে। বিশেষ করে বয়স্ক হজযাত্রী এবং যারা স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য তীব্র গরমের সময় হজ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ছিল। নতুন এই সময়সূচি তাদের শারীরিক কষ্ট লাঘবে সহায়ক হবে।
এছাড়া, এই পরিবর্তনটি হজের সময় বিশাল জনসমাগম পরিচালনা, লজিস্টিকস এবং নিরাপত্তা পরিকল্পনায় কর্তৃপক্ষের জন্য আরও সুবিধা দেবে। অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা আবহাওয়া কর্তৃপক্ষের জন্য ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আরও সহজ করে তুলবে, যা হজকে আরও নিরাপদ ও আরামদায়ক করে তুলবে।
এই ঐতিহাসিক পরিবর্তনটি বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে একটি সুসংবাদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ এটি হজ পালনের প্রক্রিয়াকে আরও মানবিক এবং সহজলভ্য করবে।