পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে দেশজুড়ে যখন আনন্দের রেশ, তখন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া। গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে কক্সবাজার সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট ও উপকূলীয় এলাকা থেকে ৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, যা ঈদের আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে। নিহতদের মধ্যে তিনজন পর্যটক এবং তিনজন স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছেন, যার মধ্যে বাবা-ছেলের এক মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটেছে।
সোমবার (৯ জুন) দুপুরে সৈকতের সায়মন বিচ পয়েন্টে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। রাজশাহী থেকে কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা ৬০ বছর বয়সী শাহীনুর রহমান এবং তার ২০ বছর বয়সী ছেলে সিফাত সৈকতে গোসল করতে নেমেছিলেন। কিন্তু তীব্র স্রোতের টানে দুজনেই ভেসে যান। সি সেফ লাইফগার্ড সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে পথে তাদের মৃত্যু হয়। এই ঘটনা ঈদের ছুটিতে আসা অনেক পর্যটকের মনে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে।
একই দিনে সৈকতে আরও কয়েকটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে।
মোহাম্মদ রাজীব (২৮): চট্টগ্রাম থেকে ঈদের ছুটিতে আসা পাঁচ বন্ধুর একজন, গ্রাফিক্স ডিজাইনার মোহাম্মদ রাজীব রোববার বিকেলে গোসল করতে গিয়ে স্রোতের টানে তলিয়ে যান। প্রায় ৭ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর রাত ১২টার দিকে সৈকতের ‘কবিতা চত্বর’ পয়েন্ট থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
নুরুজ্জামান: রোববার দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজার পৌর শহরের বাহারছড়া এলাকার নুরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হন। নিখোঁজের ২৩ ঘণ্টা পর সোমবার দুপুর ১টার দিকে নাজিরারটেক সৈকতের শেষ প্রান্ত থেকে তার ভাসমান লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
অজ্ঞাত পরিচয়: একইদিন সকালে ইনানী সৈকত এলাকায় একটি অর্ধগলিত অজ্ঞাত লাশ ভেসে আসে, যা পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। হিমছড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জানিয়েছেন, লাশের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
সুগন্ধা ও খুরুশকুলে আরও লাশ: সোমবার সকালেই সুগন্ধা পয়েন্ট এলাকায় আরও একটি লাশ ভেসে থাকতে দেখা যায়। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। এছাড়া, দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল এলাকা থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় আরও একটি লাশ উদ্ধার করেছেন স্থানীয়রা, যার পরিচয়ও এখনো মেলেনি।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন এই ছয়টি লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নিহতদের মধ্যে তিনজন পর্যটক এবং তিনজন স্থানীয়। তাদের মধ্যে বাবা ও ছেলে স্রোতের টানে পানিতে ডুবে মারা গেছেন। তবে সদরের খুরুশকুল এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া লাশটির মৃত্যুর কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি এবং বিষয়টি তদন্তাধীন।
এই ধারাবাহিক মৃত্যুর ঘটনা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং লাইফগার্ড সদস্যদের আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন পর্যটকদের অনেকে।