পবিত্র ঈদুল আজহার তৃতীয় দিনেও রাজধানী ঢাকা থেকে ঘরমুখো মানুষের স্রোত অব্যাহত রয়েছে। কোরবানির ব্যস্ততা সেরে ও যানজট এড়াতে অনেকেই দেরিতে যাত্রা করছেন, যার ফলে ঈদের পরবর্তী দিনগুলোতেও বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আজ সোমবার (৯ জুন) সকালে রাজধানীর গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন গন্তব্যের বাসের জন্য অপেক্ষারত যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। কাউন্টার ম্যানেজাররা জানিয়েছেন, প্রতিটি বাসই যাত্রীপূর্ণ অবস্থায় টার্মিনাল ছাড়ছে।
গোল্ডেন লাইন পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার হাফিজুর রহমান জানান, ঈদের পর সাধারণত কয়েকদিন যাত্রীর চাপ থাকে। সকাল থেকে তাদের ১৭টি বাস বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে এবং একটিও খালি যায়নি। স্টার এক্সপ্রেসের কাউন্টার ম্যানেজার হৃদয়ও একই তথ্য দিয়ে বলেন, তাদেরও সকাল থেকে ছেড়ে যাওয়া দুটি বাস কানায় কানায় পূর্ণ ছিল।
দেরিতে ঢাকা ছাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের সময় কসাইয়ের কাজ বা অন্যান্য ব্যবসায়িক ব্যস্ততা। এছাড়া, ঈদের প্রথম দুই দিনের যানজট এড়িয়ে ফাঁকা রাস্তায় আরামদায়ক যাত্রা করতে চান অনেকে।
কচুক্ষেতে কসমেটিকসের ব্যবসা করেন সাজ্জাদ হোসেন। স্ত্রী, কন্যা ও ছেলেকে নিয়ে বগুড়া যাচ্ছিলেন তিনি। সাজ্জাদ জানান, “এবার প্রথম ঢাকাতেই কোরবানি করেছি। মা ও অন্যদের সঙ্গে ঈদ করতে আজ যাচ্ছি। চাঁদ রাত পর্যন্ত ব্যবসা ছিল। তাছাড়া ঈদের সময় যাওয়া অনেক কষ্টের, তাই এবার ঈদের পরে যাচ্ছি।”
অন্যদিকে, জীবিকার তাগিদে ঈদের পরদিন ঢাকায় আসা মানুষের সংখ্যাও কম নয়। দিনাজপুরের বাদুর বাজার থেকে আসা মানিক, যিনি পেশায় একজন কসাই, ঈদের একদিন আগে ঢাকায় আসেন। তিনি জানান, “গত দুইদিন কসাইয়ের কাজ করে খুব ভালো আয় হয়েছে। ৩০-৪০ হাজার টাকার মতো আয় হয়, যা দিনাজপুরে হয় না। প্রতিবছর ঈদের এক দিন আগে ঢাকায় আসি আর ঈদের দুই দিন পর চলে যাই।”
শুধু ঢাকা ছাড়ার চিত্রই নয়, ঈদের তৃতীয় দিনে কর্মস্থলে যোগ দিতে অনেকে রাজধানীতে ফিরছেন। রাজবাড়ী নতুন বাজার থেকে ছোট ভাইকে নিয়ে ঢাকায় ফিরেছেন মিলন। তিনি জানান, যাত্রাপথে কোনো রকম ঝক্কি-ঝামেলা হয়নি। “অন্য সময় ৫-৬ ঘণ্টা লাগলেও আজ ৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকায় ফিরতে পেরেছি। ছোট ভাইয়ের মাদরাসা খোলা, তাই তাকে নিয়ে ফিরতে হয়েছে। আমিও কর্মস্থলে যোগ দেবো।”
বর্তমানে রাস্তায় যানজট না থাকায় যাত্রীরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারছেন। এই নির্বিঘ্ন যাতায়াত ব্যবস্থা ঈদ পরবর্তী সময়েও মানুষের ঢাকা ছাড়া বা কর্মস্থলে ফিরে আসার প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলছে।