এবারের ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে দেখা দিয়েছে এক নতুন সংকট। বিশেষ করে ছাগলের চামড়ার কোনো কদরই নেই বললেই চলে। রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার পশুর চামড়ার প্রধান কেনাবেচার কেন্দ্র আমিনবাজার। আজ রোববার (৮ জুন) দুপুর পর্যন্ত এই বাজারটিতে কোনো আড়তদারকে ছাগল বা ভেড়ার চামড়া কিনতে দেখা যায়নি। ফলে বাধ্য হয়েই মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এসব চামড়া বাজার সংলগ্ন সড়ক ও ফুটপাতে ফেলে যাচ্ছেন।
সাধারণত কোরবানির ঈদকে ঘিরে চামড়ার বাজারে একটা চাঙ্গা ভাব দেখা যায়। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম। আমিনবাজারে বড় আকারের গরুর চামড়া ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হলেও ছাগল ও ভেড়ার চামড়ার চাহিদা একেবারে তলানিতে। অনেক ব্যবসায়ী বলছেন, ফ্রিতেও এই চামড়া কেউ নিতে চাইছে না।
এদিন দুপুর ১২টায় আমিনবাজারের চিত্র ছিল হতাশাজনক। মাত্র একজন ক্রেতাকে গরুর চামড়া কিনতে দেখা যায়। এছাড়া কিছু মানুষ ছুরি-চাকু হাতে চামড়ার গায়ে লেগে থাকা মাংস ও হাড় কাটতে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু ছাগলের চামড়ার জন্য কোনো ক্রেতা বা আড়তদারের দেখা মেলেনি।
আড়তদার শহিদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, “আজ চামড়া আসছে কম। এক পিস, দুই পিস করে আসছে। সকাল থেকে মাত্র ২০ পিস চামড়া কিনেছি। দাম গতকালের মতোই ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। গতকাল ঈদের দিন ৬০০ পিসের বেশি চামড়া সংগ্রহ করেছি।” ছাগলের চামড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ছাগলের চামড়ার ভালো দাম ট্যানারি দিতে চায় না। এ কারণে এই চামড়া কেউ কিনছে না।”
৬ পিস ছাগলের চামড়া নিয়ে আমিনবাজারে এসে বিপাকে পড়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ী মাকসুদ আলম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, “এখন কী করবো বুঝছি না। ছাগলের চামড়া কেউ নিচ্ছে না। ছাগলের চামড়ার দাম নেই। এতদূর থেকে ছাগলের চামড়া এনে বিপদে পড়েছি।” তার মতো আরও অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ী তাদের সংগৃহীত ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে না পেরে বাধ্য হয়ে সেগুলো ফুটপাতে ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্যানারি মালিকদের অনাগ্রহ এবং ছাগলের চামড়ার প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণে বেশি খরচ হওয়ার কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে। কম দামের কারণে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এই চামড়া সংগ্রহে উৎসাহিত হন না এবং সংগ্রহ করলেও বিক্রি করতে না পেরে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এই পরিস্থিতি চামড়া শিল্পের একটি বড় অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং কোরবানির পশুর চামড়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
এছাড়া, পরিবেশের জন্যও এটি একটি উদ্বেগের কারণ, ফেলে দেওয়া চামড়া পচে পরিবেশ দূষণ ঘটাতে পারে। এই সংকট নিরসনে দ্রুত সরকারের এবং সংশ্লিষ্ট মহলের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।