মহানবী (স.) যেভাবে কোরবানির মাংস বণ্টন করতেন

কোরবানির মাংস বণ্টন
মুহাম্মদ নূরে আলম

ইসলাম ধর্মের ইতিহাসের মতোই কোরবানির ইতিহাস প্রাচীন। মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা নিকটে। কোরবানি আল্লাহর আনুগত্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। এর মাধ্যমে ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাধ্যমে প্রিয় বস্তু আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করা হয়, যা অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে। এটাই কোরবানির মূল উদ্দেশ্য।

কোরবানির মাংস ভাগ করার নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করতেন: এক ভাগ পরিবারের জন্য, এক ভাগ গরিব প্রতিবেশীদের জন্য, এবং এক ভাগ গরিব-মিসকিনদের জন্য। আল্লাহ বলেন, “অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্থদের আহার করাও।” (সূরা হজ্ব:২৮)। রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমরা নিজেরা খাও, অন্যকে খাওয়াও এবং সংরক্ষণ কর।” (বুখারি:৫৫৬৯)। এখানে ‘খাওয়াও’ বলতে অভাবীদের দান ও ধনীদের উপহার দেওয়া বোঝায়।

কোরআন ও হাদিসে মাংস তিন ভাগ করার ইঙ্গিত থাকলেও পরিমাণ নির্দিষ্ট নয়। রাসূল (সা.)-এর আমলে তিনি কিছু মাংস রান্নার জন্য রেখে বাকিটা দান ও বিতরণ করতেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবন ওমর (রা.) থেকে জানা যায়, “কোরবানির মাংসের এক-তৃতীয়াংশ পরিবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-প্রতিবেশীদের জন্য, এবং এক-তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনদের জন্য।” এটি সাহাবাদের আমল থেকে পরিমাণ নির্দিষ্ট করার প্রমাণ। তবে, গরিব কোরবানিদাতার পরিবার বড় হলে বা আশেপাশে অভাবী না থাকলে পুরো মাংস নিজেরা খাওয়া জায়েজ। ধনীদের বিতরণ করা বাধ্যতামূলক নয়, তবে নিয়ত শুদ্ধ ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হতে হবে। পুরো মাংস দান করাও জায়েজ।

হযরত আবদুল্লাহ ইবন ওমর (রা.) বলেন, “কোরবানির মাংস পুরোটা নিজেরা খাওয়া, দরিদ্রদের দান করা, বা আত্মীয়-প্রতিবেশীদের উপহার দেওয়া যায়।” ইবন মাসঊদ (রা.) মাংস তিন ভাগ করে নিজেরা, ইচ্ছামতো ব্যক্তিদের ও ফকির-মিসকিনদের দিতেন। ইসলামি ইমামগণও তিন ভাগ করাকে মুস্তাহাব মনে করেন।

কোরবানির মাংস আত্মীয় ও গরিবদের মাঝে বিতরণ না করা অত্যন্ত নিন্দনীয়, কারণ এতে কৃপণতা প্রকাশ পায়। কোরবানি অহংকার থেকে মুক্তি ও অন্তরের পবিত্রতা নিশ্চিত করে। আলেমগণ বলেন, মাংস একা খাওয়া উচিত নয়, এতে অন্তরের সীমাবদ্ধতা প্রকাশ পায়।

মুহাম্মদ নূরে আলম

মুহাম্মদ নূরে আলম

মুহাম্মদ নূরে আলম (Muhammad Noora Alam) একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক ও কনটেন্ট বিশেষজ্ঞ, যিনি পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রিন্ট, অনলাইন এবং ডিজিটাল মিডিয়ায় কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ঢাকা পোস্ট, নয়াদিগন্ত, বিজনেস মিরর এবং শিরোনাম মিডিয়ার মতো প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমে সাব-এডিটর ও কনটেন্ট ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এনভিডিয়া ও দুবাই ওয়ান মিলিয়ন প্রমপ্টার্স থেকে জেনারেটিভ এআই ও প্রমপ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সনদপ্রাপ্ত। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পাঠকবান্ধব, প্রাসঙ্গিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রভাব ফেলতে সক্ষম কনটেন্ট তৈরিতে তার দক্ষতা অনন্য। ব্যবসা, প্রযুক্তি, সমাজ ও সমসাময়িক বিষয়ের উপর লেখালেখিতে তার পারদর্শিতা রয়েছে। পাশাপাশি তিনি ‘স্বপ্নবাজ ফাউন্ডেশন’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ‘রেঁনেসা ফাউন্ডেশন’-এর মিডিয়া প্রধান হিসেবে কাজ করছেন।

Leave a Reply

scroll to top