নানান শর্তে আটকে থাকা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ঋণ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ চলতি জুন মাসেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপে শেষ দুই কিস্তির ঋণ সহায়তা এখন পাওয়া সম্ভব হবে।
ইতোমধ্যে আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে একাধিক দফা বৈঠক হয়েছে। তাদের দেওয়া কিছু শর্ত মেনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তিন ধাপে ৪.৭ বিলিয়ন / ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্যাকেজের আওতায় ২.৩১ বিলিয়ন / ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এ অর্থ এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (EFF), এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ECF) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (RSF) আওতায় দেওয়া হয়েছে।
চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপে আরও ১.৩ বিলিয়ন ডলার ছাড় করতে যাচ্ছে আইএমএফ। যদিও এই ঋণ ফেব্রুয়ারিতে পাওয়ার কথা ছিল। আইএমএফের ১২টি শর্তের একটি ছিল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, যা গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, দীর্ঘদিনের মতবিরোধের অবসান ঘটিয়ে বিনিময় হার নমনীয় করার বিষয়টি মেনে আইএমএফ ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা ও ডলারের বিনিময় হার পদ্ধতি হলো “ক্রলিং পেগ”।
শর্তগুলোর মধ্যে ছিল মুদ্রানীতি কঠোরকরণ, কর রাজস্ব আদায়ে উন্নতি, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার বাস্তবায়ন ও সুশাসন কৌশল গ্রহণ। শর্ত মেনে এনবিআরকে নীতি ও বাস্তবায়ন বিভাগে ভাগ করায় সরকার কিছুটা বিপাকে পড়েছে। তবে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক রেজ্যুলেশন অধ্যাদেশসহ বহু শর্ত পূরণ করেছে।
আইএমএফের প্রতিনিধিদল অর্থ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং পরিসংখ্যান ব্যুরোর সঙ্গে বৈঠক করেছে। অন্যদিকে, আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলোর মধ্যে ছিল—সামাজিক ও মূলধন বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক রিজার্ভ, বাজেট ঘাটতি, রিজার্ভ মানি ও কর রাজস্ব আদায়।
গত বছরের জুন ও ডিসেম্বরে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ বাড়ানো, রাজস্ব আদায়সহ বেশ কিছু শর্ত পূরণে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়। এখনো স্পষ্ট নয়, আইএমএফের বর্তমান প্যাকেজে নতুন কোনো ঋণ অন্তর্ভুক্ত হবে কিনা।
২০২৩ সালে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাত কিস্তিতে ঋণ দেওয়ার কথা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তির পর্যালোচনায় গত ৬-১৭ এপ্রিল আইএমএফ মিশন ঢাকা সফর করে। সিদ্ধান্ত ছাড়াই আলোচনা গড়ায় ২১-২৬ এপ্রিল ওয়াশিংটনের আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বসন্তকালীন বৈঠকে।
পরবর্তী সময়ে ৫ ও ৬ মে আইএমএফ ও বাংলাদেশ দুই দিন ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে, তাতেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ঋণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক শর্ত মানতে রাজি হয়, এবং আইএমএফ কিছু ছাড় দিলে কিস্তি ছাড়ের পথ উন্মুক্ত হয়।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি শুরু হওয়া ঋণ কর্মসূচির আওতায় তিন কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
ঋণ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ উদ্দিন খান জানান, “আইএমএফ-এর সঙ্গে আমাদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আর কোনো সময় বাড়বে না, চলতি মাসেই চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের ঋণ পেয়ে যাবো। ব্যাংক রেগুলেশন এ অর্থপ্রাপ্তিতে সহায়তা করেছে, যা বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।”