প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ভোলাবাসী। তার উপর কোনধরণের প্রাকৃতিক বিপর্যয় থাকলে এই দুর্ভোগের মাত্রা বেড়ে যায় আরও।
জানা গেছে, ভোলা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড ও সদর উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের প্রতিটি ফিডারে চলছে রুটিন মাফিক বিদ্যুতের লোডশেডিং। দিনের বেশিরভাগ সময়ই দেখা মিলেনা বিদ্যুতের। এরকম পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত ভোলার জনজীবন। পাশাপাশি বিঘ্নিত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কল-কারখানার উৎপাদন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
লোডশেডিং এ অতিষ্টঠ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে ভোলার নারী উদ্যোক্তা এসবি বীথী বলেন, অনেক সহ্য করছি। আন্দোলন এইবার শুরু হইবো, ভোলা পাওয়ার হাউজ ঘেরাও করো হাতে নিয়া ঠুন্ডা ঝাড়ু। তুমি কে আমি কে? কারেন্ট!!! কারেন্ট!!!
শহরের হোমিও কলেজ রোড এলাকার মো. ফিরোজ আলম পাটোয়ারী বলেন, গত ১৫ বছরে ভোলার বিদ্যুতের এত অধঃপতন! বিল বাড়ছে, আর বিদ্যুৎ পাচ্ছি না।
ভোলা জেলায় ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ মেগাওয়াট। প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় ট্রান্সফরমার, গ্রিড সাবস্টেশন ও টেকসই সঞ্চালন লাইনের অভাবে প্রয়োজনীয় লোড নিতে পারছেনা বিতরণ বিভাগ। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে বন্ধ রয়েছে ভোলা বিসিক শিল্প নগরীর মিল, কল-কারখানা। ফলে অলস সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা।
অন্যদিকে, বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে ওজোপাডিকো ভোলার নির্বাহী প্রকৌশলী দপ্তর জানায়, ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লেন্ট (MW power plant) এ পাওয়ার ট্রান্সফর্মারের এলটি(LT) স্থানে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বিদ্যুৎ বন্ধ থাকে প্রায়ই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদরে ২০ মেগাওয়াট, বোরহানউদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলা সদরে ১০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। এ ৩০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে তারা ২০ থেকে ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে। এতে করে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং করতে হচ্ছে তাদের।
অন্যদিকে, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ৯১ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে তারা বোরহানউদ্দিন প্লান্ট থেকে ৬৮ থেকে ৭০ মেগাওয়াট ও রেন্টালের একটি ইউনিট থেকে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে। এতে তাদের ১০ থেকে ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এ ঘাটতি পূরণ করতে চলছে অনিয়ন্ত্রিত লোডশেডিং।
ভোলা জেলা সদরের সাড়ে ৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্ল্যান্টটি গত ২৫ জানুয়ারি বন্ধের পর থেকে বোরহানউদ্দিনের পাওয়ার প্লান্ট থেকে লোড নিচ্ছেন ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। কিন্তু ৯০ মেগাওয়াট ধারণ ক্ষমতার একমাত্র ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় প্রয়োজনের ১৩০ মেগাওয়াট লোড নিতে পারছে না। যার কারণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে বিতরণকারী সংস্থাকে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। তবে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবি গ্রাহকদের।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাব-এর জেলা শাখার সভাপতি মো. সুলাইমান বলেন, ভোলা থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু ভোলার গ্রাহকরা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। গ্রিড সাবস্টেশনসহ বিতরণের যেসব সমস্যা রয়েছে তা দ্রুত সমাধান করে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার দাবি জানান তিনি।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) নির্বাহী প্রোকৌশলী মো. ইউসুফ জানান, ২৫ জানুয়ারি রেন্টাল প্ল্যান্ট বন্ধ হওয়ার পর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের সোর্স লাইন দিয়ে বোরহানউদ্দিন থেকে বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে। সেখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যৎ না পাওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। তাছাড়া সঞ্চালন লাইনের দূরত্ব বেশি হওয়ায় ঝড়-বৃষ্টিতে অনেক সময় লাইন বিচ্যুত হচ্ছে। বোরহানউদ্দিন প্ল্যান্টের ২টি ট্রান্সফরমারের মধ্যে একটি অচল থাকায় সরবরাহ হচ্ছে না প্রয়োজনীয় বিদ্যৎ।