আগামী ২০ বছরের মধ্যে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের বেশিরভাগই আফ্রিকার শিক্ষাব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় করার ঘোষণা দিয়েছেন মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বখ্যাত দানবীর বিল গেটস। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। সোমবার (২ জুন) এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ নিউজ এ তথ্য জানায়।
ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়নের সদর দপ্তরে সরকার প্রধান, কূটনীতিক এবং অংশীদারদের উদ্দেশে দেওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে গেটস বলেন, “সরকারের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে এই তহবিল ব্যবহার করা হবে।”
তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মাধ্যমে আফ্রিকার প্রতিটি দেশই সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে এবং এই পথে অংশীদার হওয়া একটি রোমাঞ্চকর বিষয়।”
গেটস বিশেষভাবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, একজন মাকে গর্ভধারণের আগে, গর্ভাবস্থায় ও পরে সুস্থ রাখা এবং পুষ্টি নিশ্চিত করলে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। শিশুর জীবনের প্রথম চার বছরেও ভালো পুষ্টি নিশ্চিত করলে তা বিশাল পরিবর্তন আনে।”
তিনি ইথিওপিয়া, রুয়ান্ডা, জিম্বাবুয়ে, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া এবং জাম্বিয়াকে সাহসী নেতৃত্বের জন্য বিশেষভাবে প্রশংসা করেন। এসব দেশ ম্যালেরিয়া, এইচআইভি প্রতিরোধসহ নানা ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গেটস বলেন, “আফ্রিকানদের কঠোর পরিশ্রম আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করে, এমনকি সীমিত সম্পদযুক্ত এলাকাগুলোতেও। সবচেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সমাধান পৌঁছে দেওয়ার এই ধরনের উদ্যোগ সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ী।”
এআই-এর সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা
বিল গেটস তাঁর ভাষণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)–এর সম্ভাবনাকেও গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মতো প্রযুক্তিগত বিপ্লব আফ্রিকায় প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে অনেকটাই পাশ কাটিয়ে দিয়েছে। এখন, যখন আপনারা পরবর্তী প্রজন্মের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ছেন, তখন এআই-কে কীভাবে এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তা ভাবার সময় এসেছে।”
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “রুয়ান্ডায় এআই-চালিত আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা শনাক্ত করা হচ্ছে, যাতে নারীদের সময়মতো জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা দেওয়া যায়।”
গেটসের এই ঘোষণা এমন এক সময় এলো, যখন বৈশ্বিক সাহায্য, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের USAID তহবিল উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিগতভাবে এত বড় অঙ্কের প্রতিশ্রুতি আফ্রিকার উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
গেটস ফাউন্ডেশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গেটস এ সপ্তাহে ইথিওপিয়া ও নাইজেরিয়ায় সফর করছেন। সেখানে তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন বিদেশি সাহায্যের কাটছাঁটের প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন খাতের বর্তমান অবস্থা এবং আগামী ২০ বছরের পরিকল্পনার বিস্তারিত ঘোষণা দেবেন।
বিল গেটস এর আগে জানিয়েছিলেন, মৃত্যুর আগেই নিজের মোট সম্পদের ৯৯% দান করবেন। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন। “আমি চাই না মানুষ বলুক আমি ধনী অবস্থায় মারা গেছি। আমি চাই তারা বলুক, আমি আমার সম্পদ দিয়ে মানুষের জীবন বদলে দিয়েছি,” বলেন গেটস।
বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি বিল গেটসের এই ঘোষণা আফ্রিকার জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের পথে আফ্রিকা যে এই সহায়তা দিয়ে বড় একটি ধাপ এগিয়ে যাবে, সে প্রত্যাশায় আশাবাদী বিশ্ব।
