২০২৫-২৬ বাজেট: কমবে যেসব পণ্যের দাম, বাড়বে যেগুলোর

11.jpg

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ বাজেটে রাজস্ব আদায় ও দেশীয় শিল্প সুরক্ষার পাশাপাশি সাধারণ ভোক্তার দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। ফলে কর কাঠামোতে আনা হচ্ছে কিছু পরিবর্তন। এতে কিছু প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমে যেতে পারে, আবার কিছু পণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।

দাম কমতে পারে যেসব পণ্যের

এবারের বাজেটে সবচেয়ে স্বস্তির খবর এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) ব্যবহারকারীদের জন্য। এলএনজি আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা জ্বালানি খাতে চাপ কমাতে সহায়ক হবে। একইসঙ্গে জ্বালানি তেল আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ এবং ক্রুড ফুয়েল আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকায় তেলের দাম কিছুটা কমে যেতে পারে।

চামড়া শিল্পকে সহায়তা দিতে প্রয়োজনীয় কিছু রাসায়নিকের শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে কোরবানির ঈদের আগে চামড়া প্রক্রিয়াকরণে খরচ কমে যেতে পারে। এ ছাড়া সয়াবিন মিল ও কাগজশিল্পের কাঁচামাল আমদানিতেও শুল্ক কমানোর প্রস্তাব থাকায় এসব পণ্যের দাম কমতে পারে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন ধান, গম, ডাল, চিনি, লবণ, ফলমূল ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশ আমদানিতে উৎসে কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বাজারে এসব পণ্যের দামের ওপর চাপ কমবে। পাশাপাশি চিনির আমদানি শুল্ক টনপ্রতি ৪৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৪০০০ টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে, যা ভোক্তার জন্য স্বস্তির বার্তা।

নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হচ্ছে, ফলে সংবাদপত্রের খরচ কিছুটা কমে আসতে পারে। ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্যও সুখবর আছে—ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কাঠে শুল্ক ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৬ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকছে, ফলে ব্যাটের দাম কমবে।

দেশীয় সফটওয়্যার খাতে উদ্ভাবন বাড়াতে বিদেশি সফটওয়্যার টুলস আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে, মাটির ও পাতার তৈরি পণ্যে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে সম্পূর্ণ অব্যাহতির প্রস্তাব থাকছে, যা পরিবেশবান্ধব পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে সহায়ক হবে।

দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের

অন্যদিকে, বাজেটে কিছু পণ্যের দাম বাড়ার দিকেও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। রড ও স্টিল পণ্যে ভ্যাট ও অগ্রিম আয়কর বাড়ানো হচ্ছে, ফলে প্রতি টন রডের দাম গড়ে প্রায় ১,৪০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। ফ্রিজ ও এয়ারকন্ডিশনার উৎপাদনে ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে, যা পণ্যের দাম বাড়াবে।

মোটরসাইকেল ও সাইকেল যন্ত্রাংশে শুল্ক-ভ্যাট বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশায় ব্যবহৃত ডিসি মোটরে শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকায় ব্যাটারি রিকশার দামও বাড়তে পারে।

কসমেটিকস খাতে যেমন লিপস্টিক ও আইলাইনারের ন্যূনতম মূল্য দ্বিগুণ করার প্রস্তাব থাকায় এসব পণ্যের দাম বাড়বে। টেবিলওয়্যার ও কিচেনওয়্যারে ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ এবং ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্যে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। এসব কারণে রান্নাঘরের অনেক পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে।

সিগারেট পেপারে সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকছে। এছাড়া দেশি মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। বিদেশি চকলেট, খেলনা ও হেলিকপ্টার আমদানিতেও শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। মার্বেল ও গ্রানাইটের শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকায় নির্মাণ খরচ বাড়বে।

এই বাজেটে সরকার একদিকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যে কর কাঠামো সংশোধন করছে, অন্যদিকে দেশীয় শিল্প সুরক্ষা ও জনগণের চাহিদার পণ্যকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কিছু পণ্যে কর ছাড় দিচ্ছে। ফলে প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়িত হলে বাজারে কিছু পণ্যের দাম বাড়লেও, অনেক প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমে আসবে বলে আশা করা যায়।

Leave a Reply

scroll to top