আরো দু'জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল

হাসিনাকে দিয়ে শুরু জুলাই গণহত্যার বিচার

হাসিনাকে দিয়ে শুরু জুলাই গণহত্যার বিচার
নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন বিভাগ। রোববার (১ জুন, ২০২৫) দুপুর ১২টার দিকে প্রসিকিউটর গাজী এম এস তামিম ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার দপ্তরে এ অভিযোগ জমা দেন। অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, যিনি বর্তমানে পলাতক, এবং তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, যিনি কারাগারে রয়েছেন।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত ঘটনার জন্য তাদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে এ ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ এবং ‘সুপিরিয়র কমান্ডার’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, তিনি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে হেলিকপ্টার, ড্রোন, এবং এপিসি (সাঁজোয়া যান) সহ মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরস্ত্র ও নিরীহ জনগণকে নিশ্চিহ্ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এই নির্দেশ বাস্তবায়নের তাগিদ দেন, এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন তা কার্যকর করেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৩, ৪ ও ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শেষ মুহূর্তে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে নির্দেশ দেন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের সম্পূর্ণ নির্মূল করতে। এর মধ্যে সরাসরি হত্যা ও গুলি করে পঙ্গু করার নির্দেশও অন্তর্ভুক্ত। প্রসিকিউশন শেখ হাসিনার একাধিক কল রেকর্ড সংগ্রহ করেছে, যা এই অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। এছাড়া, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ, উদ্ধারকৃত বুলেট, হেলিকপ্টারের ফ্লাইট শিডিউল, এবং অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।

মামলায় ৩৫ থেকে ৪০ জন সাক্ষী রাখা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সরকারের দুই উপদেষ্টা, পুলিশ কর্মকর্তা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, আহত ব্যক্তি, এবং শহীদদের স্বজন। সাক্ষীদের মধ্যে আছেন যারা আন্দোলনকারীদের চিকিৎসা দিয়েছেন এবং যারা শহীদদের মরদেহ দাফন করেছেন। প্রমাণ হিসেবে কল রেকর্ড, অসংখ্য ভিডিও ফুটেজ, জাতীয় দৈনিকের কাটিং, এবং উদ্ধারকৃত বুলেট জব্দ করা হয়েছে।

এর আগে, গত ১৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে প্রথম অভিযোগ দায়ের করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়, এবং গত ১২ মে তদন্ত সংস্থা তিন আসামির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেয়। প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে প্রথমটি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ‘উস্কানি’ ও ‘প্ররোচনা’ দেওয়া, দ্বিতীয়টি সরাসরি গুলির নির্দেশনা, এবং বাকি তিনটি সুনির্দিষ্ট ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত।

প্রসিকিউশন জানিয়েছে, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমার পর ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিদের হাজির হওয়ার নির্দেশ দেবে। এই মামলা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ এটি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম আনুষ্ঠানিক অভিযোগ। মামলার পরবর্তী শুনানি ও আইনি প্রক্রিয়া ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

Leave a Reply

scroll to top