হাজীদের কোরবানি করার নিয়ম

হাজীদের কোরবানি করার নিয়ম

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো কোরবানি বা পশু জবাই। মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে এর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন (সুরা বাকারা, আয়াত ১৯৬)। হজ পালনের ক্ষেত্রে এই কোরবানি কখন, কীভাবে এবং কাদের জন্য ওয়াজিব, সে বিষয়ে বিস্তারিত নিয়মাবলী ও প্রাসঙ্গিক মাসয়ালা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা হাজিদের জন্য অপরিহার্য।

যাদের জন্য কোরবানি ওয়াজিব
কিরান ও তামাত্তু হজ আদায়কারীদের জন্য কোরবানি ওয়াজিব। কারণ, তারা একই সফরে ওমরাহসহ হজ পালন করেন। তবে, ইফরাদ হজ আদায়কারীদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, যদিও তারা কোরবানি করলে সওয়াব পাবেন। সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য একাধিক কোরবানি করা উত্তম; যেমনটি রাসূলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের সময় ১০০টি উট কোরবানি করেছিলেন (সহিহ বুখারী, হাদিস ১৭১৮)।

কোরবানির পশুর গুণাগুণ ও অংশীদারিত্ব
ঈদুল আজহার কোরবানির পশুর জন্য প্রযোজ্য সকল শর্ত হজের কোরবানির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পশুর বয়স ও সুস্থতা এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১. বয়স: উট, গরু ও মহিষের ক্ষেত্রে দুই বছর এবং বকরি, ভেড়া ও দুম্বার ক্ষেত্রে এক বছর বয়সী হতে হবে।
২. সুস্থতা: পশু অবশ্যই কোরবানি শুদ্ধ না হওয়ার মতো কোনো ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে হবে।
৩. অংশীদারিত্ব: উট, গরু ও মহিষের ক্ষেত্রে সর্বাধিক সাতজন অংশীদার থাকতে পারবে।
৪. কোরবানির সময় ও স্থান

কোরবানির সময়
কোরবানির সময় শুরু হয় ১০ জিলহজ সুবহে সাদিকের পর থেকে এবং শেষ হয় ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত। তবে, হাজিদের জন্য কোরবানির সর্বোত্তম সময় হলো ১০ জিলহজ বড় শয়তানকে পাথর মারার পর থেকে। এর আগে, কোরবানি করলে “দম” বা কাফফারা ওয়াজিব হবে।

কোরবানির পশু জবাই নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল হাজিরা হলক (মাথার চুল মুণ্ডন বা ছাঁটাই) করে ইহরাম থেকে হালাল হতে পারবেন। কোরবানির আগে হলক করলে কাফফারাস্বরূপ আরেকটি পশু জবাই করতে হবে। তবে হজের কোরবানির পশু এবং যেকোনো কাফফারা বা জরিমানার পশু হারামের সীমার মধ্যে জবাই করা আবশ্যক। হারামের বাইরে জবাই করলে তা আদায় হবে না। মিনায় কোরবানি করা জরুরি নয়, হারামের যেকোনো স্থানেই করা যায়।

গোশতের বিধান ও ব্যতিক্রম
হজের কোরবানির গোশতের বিধান ঈদুল আজহার কোরবানির গোশতের মতোই। হাজিরা নিজেও খেতে পারবেন, অন্যকে খাওয়াতে পারবেন, দান-সদকাও করতে পারবেন এবং জমিয়েও রাখতে পারবেন। তবে, জরিমানাস্বরূপ যে “দম” দেওয়া হয়, তার গোশত নিজেরা খাওয়া যাবে না। এটি সম্পূর্ণভাবে দরিদ্রদের সদকা করতে হবে।

কোরবানির সামর্থ্য না থাকলে করণীয়
তামাত্তু ও কিরান হজকারীর ওপর হজের কোরবানি করা ওয়াজিব। যদি কারো এই কোরবানি করার সামর্থ্য না থাকে, তবে তাকে কোরবানির পরিবর্তে ১০টি রোজা রাখতে হবে। এই ১০টি রোজার মধ্যে: তিনটি রোজা ১০ জিলহজের আগে রাখতে হবে। বাকি সাতটি রোজা হজ থেকে পরিপূর্ণরূপে অবসর হয়ে সুযোগমতো যেকোনো সময় এবং যেকোনো স্থানে রাখা যাবে। যদি ১০ জিলহজের আগে তিনটি রোজা রাখা সম্ভব না হয়, তাহলে কোরবানি করাই নির্ধারিত হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে যদি ১০ জিলহজ কোরবানির ব্যবস্থা না হয়, তবে কোরবানি না করেই হলক করে হালাল হয়ে যাবে। পরবর্তীতে সক্ষমতা অনুযায়ী হারামের সীমানার মধ্যে দুটি পশু জবাই করতে হবে – একটি হজের কোরবানির জন্য এবং আরেকটি কোরবানি না করে হালাল হওয়ার দম হিসেবে।

ঈদুল আজহার কোরবানি ও হাজি
১০ জিলহজ সুবহে সাদিক থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত এই তিন দিন যদি কোনো ব্যক্তি মুসাফির থাকেন, তাহলে তার ওপর ঈদুল আজহার কোরবানি করা ওয়াজিব নয়। তাই, কোনো হাজি সাহেব যদি এই সময়ে মুসাফির থাকেন, তবে তার জন্য ঈদুল আজহার কোরবানি ওয়াজিব নয়। তবে, যদি কোনো হাজি মক্কা শরীফে ১৫ দিনের বেশি অবস্থানের কারণে মুকিম হয়ে থাকেন, তাহলে হজের কোরবানি ছাড়াও তার ওপর ঈদুল আজহার জন্য ভিন্ন কোরবানি করা ওয়াজিব। এই ঈদুল আজহার কোরবানি মক্কা-মিনাতেও করা যেতে পারে, অথবা নিজ দেশের বাড়িতেও করা যেতে পারে।

Leave a Reply

scroll to top