বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের অধিকাংশ জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর ফলস্বরূপ আগামী তিন দিন দেশের নদ-নদীতে আরও পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এই পরিস্থিতি ৬টি জেলায় – ফেনী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনায় – বন্যা পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
আজ শুক্রবার (৩০ মে) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বুলেটিনে জানানো হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরীসহ এই অঞ্চলের নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং মাতামুহুরী নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। এর ফলে ফেনী জেলার মুহুরী নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি রয়েছে। আগামীকালে পানি স্থিতিশীল থাকলেও রোববার থেকে কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ: সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীগুলোর পানি সমতল আগামী তিন দিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এই সময়ে নদীগুলো বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এর কারণে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
রংপুর বিভাগ: ভিন্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীগুলোর পানি সমতল আগামী তিন দিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ভিস্তা নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।
উপকূলীয় অঞ্চল: আগামী একদিন পর্যন্ত বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় জোয়ার পরিলক্ষিত হতে পারে।
প্রধান নদ-নদী:
সুরমা-কুশিয়ারা: এই নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী তিন দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে; তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হতে পারে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা: এই নদ-নদীগুলোর পানি সমতল বর্তমানে স্থিতিশীল এবং বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী একদিন স্থিতিশীল থাকার পর পরবর্তী চার দিন পানি বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচে থাকবে।
গঙ্গা-পদ্মা: গঙ্গা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকলেও পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী পাঁচ দিন পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে; তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকার নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে পরবর্তীতে স্থলনিম্নচাপ আকারে টঙ্গাইল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর অথবা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও রংপুর বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে।
আজ ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। আগামীকাল শনিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমে আসতে পারে, বিশেষ করে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে তুলনামূলক কম বৃষ্টি হতে পারে।
অভ্যন্তরীণ নৌপথের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এই অঞ্চলগুলোর নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। দেশের অন্যত্র একই দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার সৃষ্ট লঘুচাপটি বৃহস্পতিবার গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। ভোর থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টি এবং মাঝে মাঝে ঝোড়ো হাওয়ার কারণে নদ-নদীগুলো ফুঁসে ওঠে। বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার গ্রামের পর গ্রাম ১ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। বরিশাল নৌবন্দর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি এবং এখনও তা চালু হয়নি বলে জানিয়েছেন বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম রেজা।