গত কয়েকদিন ধরে দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাত জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই বৃষ্টিপাতের ধারা আরও কয়েকদিন চলমান থাকতে পারে।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার (আজ শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) তথ্যানুযায়ী, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে নোয়াখালীর মাইজদীকোর্টে সর্বোচ্চ ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলোতে ইতোমধ্যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্টেশনে রেকর্ডকৃত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নিচে তুলে ধরা হলো:
ঢাকা বিভাগে: ঢাকায় ১৯৯ মিলিমিটার, ফরিদপুরে ১৭১ মিলিমিটার, মাদারীপুরে ১৬০ মিলিমিটার এবং নারায়ণগঞ্জে ১৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগে: এই বিভাগে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। চট্টগ্রামের মাইজদীকোর্টে ২৮৫ মিলিমিটার, চাঁদপুরে ২৪২ মিলিমিটার, কুমিল্লায় ১৭৯ মিলিমিটার, রাঙামাটিতে ১৪০ মিলিমিটার এবং ফেনীতে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া নিকলিতে ১৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগে: বগুড়ায় ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা এ অঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ।
খুলনা বিভাগে: তুলনামূলকভাবে কম বৃষ্টি হয়েছে। মোংলায় ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
রংপুর বিভাগে: কিছু এলাকায় খুবই সামান্য বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগে: ময়মনসিংহে ৯৫ মিলিমিটার এবং নেত্রকোনায় ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বরিশাল বিভাগে: বরিশালে ১৪১ মিলিমিটার এবং খেপুপাড়া স্টেশনে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
সিলেট বিভাগে: সাধারণত এ অঞ্চলে বেশি বৃষ্টি হলেও গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট স্টেশনে মাত্র ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
এসময় সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা গড়ে ২৪ ডিগ্রি থেকে ৩৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল। এরমধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায়, আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল বান্দরবানে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মে মাসের শেষ দিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে এই অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হচ্ছে, যা বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে বেশি প্রভাব ফেলেছে। তবে, তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকায় জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত কৃষি ক্ষেত্রে ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের ফসলে। স্থানীয় প্রশাসন বন্যার ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং নদী তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।