গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির ফলে ঢাকার বাতাসের মান মাঝারি থাকলেও ভালোর দিকে ঝুঁকে ছিল। তবে বৃহস্পতিবার (২৯ মে ২০২৫) ভোর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির কল্যাণে রাজধানীর বায়ুমান ‘ভালো’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ১০টায় ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ছিল ৩৯, যা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয় (০-৫০ স্কোর) । এর ফলে ঢাকা বিশ্বের স্বাস্থ্যকর বাতাসের শহরগুলোর সঙ্গে তুলনীয় হয়ে উঠেছে।
৩৯ একিউআই স্কোর নিয়ে ঢাকা বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ৮০তম স্থানে রয়েছে, পর্তুগালের লিসবন (৫০), জাপানের টোকিও (৫০), কানাডার মন্ট্রিয়াল (৪৯), ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি (৪৭), ইতালির রোম (৪৭), যুক্তরাষ্ট্রের সল্ট লেক সিটি (৪৭), লস অ্যাঞ্জেলেস (৪৩), এবং নেদারল্যান্ডসের রটারডাম (৪৬)-এর মতো শহরগুলোকে পেছনে ফেলেছে। পরিচ্ছন্নতার জন্য খ্যাত এই শহরগুলোর তুলনায় ঢাকাবাসী আজ স্বাস্থ্যকর বাতাসে শ্বাস নিচ্ছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বিশুদ্ধ বায়ুর শহর হিসেবে শীর্ষে রয়েছে রাশিয়ার ক্রাসনোইয়ার্স্ক (একিউআই ৩), এবং দুদিন আগে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া অস্ট্রেলিয়ার সিডনি এখন তৃতীয় স্থানে (একিউআই ১৩) । অপরদিকে, ২০২ একিউআই স্কোর নিয়ে কুয়েত সিটি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর। এরপর রয়েছে মিসরের কায়রো (১৬৪), পাকিস্তানের লাহোর (১৫৯), এবং ভারতের দিল্লি (১৫৪) ।
একিউআই স্কোর ৫১-১০০ হলে বায়ুমান ‘মাঝারি’, ১০১-১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’, ১৫১-২০০ হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১-৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’, এবং ৩০১-এর বেশি হলে ‘বিপজ্জনক’ বলে গণ্য হয়। বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণে পাঁচটি দূষণকারী উপাদান বিবেচনা করা হয়: বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂), এবং ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণের সমস্যায় জর্জরিত। শীতকালে বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, যখন বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে তা উন্নত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়, যার মূল কারণ স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্যান্সার, এবং শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ।
টানা বৃষ্টির কারণে ঢাকার বায়ুমানে এই উন্নতি স্বস্তিদায়ক হলেও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ মোকাবিলায়ও সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।