আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসছে সরকার। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে কর ছাড়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যবসার প্রসারেও থাকছে বিশেষ পরিকল্পনা। তবে আয়কর ফাঁকি রোধে কঠোর হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঋণপত্রে উৎসে কর কমানোর প্রস্তাব আসতে পারে। এর ফলে ধান, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, চিনি, ভোজ্যতেলসহ মোট ২০টি জরুরি পণ্যের দাম কমতে পারে, যা সাধারণ মানুষের জন্য হবে এক বিশাল সুখবর।
বর্তমানে এসব পণ্যের ঋণপত্রের কমিশনের উপর ১ শতাংশ উৎসে কর রয়েছে, যা কমিয়ে অর্ধেক করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যদিও এই উৎসে কর পণ্যের দামে খুব বেশি প্রভাব ফেলে না, তবুও এক শ্রেণির ব্যবসায়ী একে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে দাম বাড়িয়ে দেন। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
বাজেটে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রেও বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য আমদানি-রপ্তানির শর্ত শিথিল এবং জরিমানা ন্যূনতম রাখার প্রস্তাব আসতে যাচ্ছে। এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আমদানি ঘোষণাপত্রে ছোটখাটো ভুলের জন্য জরিমানা কমানো হবে। বর্তমানে আমদানির প্রাথমিক বিবরণীর তালিকায় (আইজিএম) যেকোনো ভুলের জন্য অন্তত ৫০ শতাংশ জরিমানা দিতে হয়, যা নতুন বাজেটে বাতিল হতে পারে। ছোটখাটো ভুলের ক্ষেত্রে নামমাত্র জরিমানা নির্ধারণের সুযোগ থাকবে।
এছাড়া, আমদানি নীতি আদেশ (আইপিও) লঙ্ঘনের জন্য আমদানি করের সমপরিমাণ ন্যূনতম জরিমানার বিধানও বাতিল হতে পারে। এতে কাস্টমস কমিশনাররা তাদের বিবেচনা অনুযায়ী তুলনামূলক কম জরিমানা আরোপ করতে পারবেন। জাহাজ কোম্পানিগুলোর কার্গো ঘোষণায় ভুলের জন্য বর্তমানে প্রযোজ্য ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকার জরিমানাও বাতিল করে সামান্য জরিমানা আরোপের সুযোগ দেওয়া হতে পারে।
অন্যদিকে, আয়কর ফাঁকি রোধে কঠোর হচ্ছে এনবিআর। দেশের হাজার হাজার ব্যবসায়ী, বিশেষ করে আমদানিকারকরা শত শত কোটি টাকার ব্যবসা করলেও অনেকে আয়কর রিটার্ন জমা দেন না। তাদের করজালের আওতায় আনতে প্রায় দেড় শতাধিক আমদানি পণ্যে অগ্রিম কর (এআইটি) বসানো হচ্ছে। আলু, পেঁয়াজ, মসুর ডাল, চিনি, ময়দা, ছোলা, ভুট্টা, তুলা এবং বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম ও তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট পণ্যে ২ শতাংশ হারে এই এআইটি বসানো হতে পারে।
এনবিআরের কর কর্মকর্তারা বলছেন, এই এআইটি ব্যবসায়ীর চূড়ান্ত কর দায় নয়, বরং এটি তার আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় সমন্বয় করে নিতে পারবেন। এর ফলে বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে না বলে দাবি এনবিআরের।
তবে, নতুন করদাতাদের জন্য সুখবর থাকছে। যারা প্রথমবারের মতো রিটার্ন জমা দেবেন, তাদের আয়ভেদে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা আয়কর দেওয়ার বিধান যুক্ত হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য নতুন করদাতাদের করভার লাঘব এবং করভীতি দূর করা। কিন্তু একইসাথে করহার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে এবং বাজেটে স্ল্যাব পরিবর্তনের কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর করের বোঝা কিছুটা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, আসন্ন বাজেট একদিকে যেমন নিত্যপণ্যে স্বস্তি এনে সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে, তেমনি অন্যদিকে আয়কর ফাঁকি রোধে কঠোর পদক্ষেপ এবং কিছু ক্ষেত্রে মধ্যবিত্তের উপর বাড়তি করের চাপও সৃষ্টি করতে পারে।