সমঝোতায় যাচ্ছে এনবিআর, স্থগিত হচ্ছে কর্মসূচি

New-Project-2-10.jpg
২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চলমান টানাপোড়েনের অবসান ঘটিয়ে সমঝোতার পথে অগ্রসর হচ্ছে দুই পক্ষ। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, সরকারের উচ্চপর্যায়ের আশ্বাসে তাদের অধিকাংশ দাবি গৃহীত হওয়ায় আপাতত আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সংশোধনীসহ নতুন অধ্যাদেশ জারির প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে এই অবস্থান পরিবর্তন এসেছে।

রোববার (২৫ মে) সন্ধ্যায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের এক শীর্ষ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, “অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। তারা আমাদের বেশিরভাগ দাবির সঙ্গে একমত হয়েছে। তাই আমরা আন্দোলন স্থগিত করছি। বিস্তারিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।”

এর আগে দুপুরে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ের নিচে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীরা ‘সম্পূর্ণ কর্মবিরতি’ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। জানানো হয়, আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এবং ওষুধ ও জীবন রক্ষাকারী পণ্য ছাড়া অন্যান্য সব কর, কাস্টমস ও ভ্যাট কার্যক্রম সোমবার (২৬ মে) থেকে স্থগিত থাকবে।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অর্থ মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে। এতে বলা হয়, ২২ মে জারি করা এক প্রেসনোটে জানানো হয়েছিল, এনবিআরের কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব উদ্বেগের সমাধান করা হবে।

নতুন বিবৃতিতে আরও বলা হয়

এনবিআরকে একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগে রূপান্তর করা হবে, যার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ থাকবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ও বিসিএস (কর) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখেই এনবিআরকে শক্তিশালী করা হবে। রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কাঠামো পৃথক করতে একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে। এই কাঠামো গঠনের আগে রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা হবে।

৩১ জুলাইয়ের মধ্যে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে এবং তা কার্যকর হবে সংশোধনের পরই। অর্থ মন্ত্রণালয় আশা প্রকাশ করে, এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে এনবিআরের কর্মকর্তাদের উদ্বেগ দূর হবে এবং রাজস্ব সংগ্রহ ও সেবা কার্যক্রম পূর্ণ উদ্যমে চালু হবে।

আন্দোলনের পেছনের দাবিদাওয়া

রাজস্ব প্রশাসনের কাঠামোগত সংস্কার ও প্রশাসনিক নিরাপত্তার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। তাদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

জারি করা অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের অপসারণ

রাজস্ব সংস্কার কমিটির সুপারিশ ওয়েবসাইটে প্রকাশ

অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে টেকসই ও গ্রহণযোগ্য রাজস্ব কাঠামো গঠন

রোববারের সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, উপ কমিশনার আব্দুল কাইয়ুম ও উপ-কর কমিশনার রইসুন নেসা বলেন, “আমরা এমন একটি পেশাদার ও কার্যকর রাজস্ব কাঠামো চাই, যা কর্মকর্তাদের অধিকার সংরক্ষণ করবে এবং জনগণের স্বার্থে টেকসই রাজস্ব নীতি নিশ্চিত করবে।”

যদিও আপাতত আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে, তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন তারা ‘সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ’ করবেন। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সংশোধনীসহ নতুন অধ্যাদেশে অংশীজনদের মতামত প্রতিফলিত হয়েছে কি না—তা খতিয়ে দেখা হবে। ঐক্য পরিষদ জানায়, দাবি পূরণ না হলে ভবিষ্যতে আবারও আন্দোলনে নামা হতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে চলমান আন্দোলন সরকারের প্রতি একটি শক্ত বার্তা হয়ে উঠেছে—যেখানে কেবল প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং অংশীজনদের মতামতের গুরুত্ব, স্বচ্ছতা ও আলোচনার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

 

Leave a Reply

scroll to top