অবশেষে ইতিহাস গড়ল আর্সেনাল! তিনবারের চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে নারী চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা ঘরে তুলল ইংলিশ জায়ান্টরা। এই জয় শুধু আর্সেনালের নয়, যেকোনো ইংলিশ ক্লাবের জন্য এটি প্রথম নারী চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়। পর্তুগালের লিসবনে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচে কাতালান ক্লাবটির টানা তিন শিরোপা জয়ের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিয়ে ১৮ বছর পর ইউরোপীয় ফুটবলে চূড়ান্ত সাফল্য পেল গানাররা।
চলতি মৌসুমে বার্সেলোনার পুরুষ ও নারী উভয় দলই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পথে দুর্দান্তভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল। তবে সেই পথে তাদের আর বেশি দূর যাওয়া হয়নি। সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের কাছে হেরে চুরমার হয় ছেলেদের স্বপ্ন, এবার মেয়েদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেল।
শনিবার (২৪ মে) রাতে লিসবনে অনুষ্ঠিত নারী চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে মুখোমুখি হয় বার্সেলোনা ও আর্সেনাল। প্রথমার্ধে কোনো দলই জালে বল পাঠাতে পারেনি। এরপর ম্যাচের ৭৪তম মিনিটে আর্সেনালের হয়ে ডেডলক ভেঙে গোল করেন স্টিনা ব্ল্যাকস্টেনিয়াস। তার করা একমাত্র গোলেই শিরোপা জয়ের স্বাদ পায় আর্সেনাল।
এই ম্যাচে বার্সেলোনাকেই পরিষ্কার ফেভারিট ধরা হয়েছিল। গত পাঁচ বছরে এটি ছিল তাদের চতুর্থ ফাইনাল। এর আগে, ফরাসি ক্লাব লিঁও ছাড়া আর কোনো দল টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতেনি। দুইবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী আইতানা বোনমাতি ও আলেক্সিয়া পুতেয়াসের নেতৃত্বে গড়া বার্সেলোনা নকআউটে উলফসবার্গ ও ইংলিশ চ্যাম্পিয়ন চেলসিকে উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ফাইনালে আর্সেনাল দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলে, বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে তারা সেরা সুযোগগুলো তৈরি করতে থাকে। বার্সেলোনার গোলরক্ষক কাটা কোল ফ্রিদা মানুম ও ব্ল্যাকস্টেনিয়াসের দুটি অসাধারণ প্রচেষ্টা রুখে দেন। তবে শেষ পর্যন্ত ব্ল্যাকস্টেনিয়াসই ৭৪তম মিনিটে জাল খুঁজে নেন।
আর্সেনালের এই জয় যেন এক রূপকথার মতো। কোচ ইয়োনাস আইডেভাল পদত্যাগ করার পর গানারদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন সহকারী কোচ রেনে সেগলার্স। তার অধীনেই ইউরোপে দুর্দান্ত পথচলা শুরু করে দলটি। রিয়াল মাদ্রিদ ও আটবারের চ্যাম্পিয়ন লিঁও-র বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও ফিরে আসার জয়েই আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। আর সেই আত্মবিশ্বাসের ওপর ভর করেই গতকালের ঐতিহাসিক জয় ছিনিয়ে আনলো আর্সেনাল।
লিসবনের স্টেডিয়ামে বার্সেলোনার সমর্থকরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাদের চিৎকারেও ম্যাচের মোড় ঘোরেনি। বার্সেলোনার সবচেয়ে কাছাকাছি গোলের সুযোগ ছিল ক্লোদিও পিনার শট, যা দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বারে লেগে ফিরে আসে। এরপর আর ছন্দে ফিরতে পারেনি বার্সা। ম্যাচের পর বার্সেলোনার তারকা ফরোয়ার্ড বোনমাতি বলেন, “আমরা আমাদের সব সমর্থকদের কাছে দুঃখিত, যারা আমাদের সমর্থন করতে এসেছে। আমরা আবার চেষ্টার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।”
ম্যাচের শুরুতে কিছুটা নার্ভাস থাকলেও দ্রুতই ঘুরে দাঁড়ায় আর্সেনাল। তাদের প্রেসিং খেলার ছন্দ কেড়ে নেয় বার্সেলোনার। পুরো ম্যাচে দলকে সামনে টানতে থাকেন ইংলিশ তারকা রুসো। রেফারি শেষ বাঁশি বাজাতেই আর্সেনালের খেলোয়াড়রা আনন্দে মেতে ওঠেন এবং গ্যালারিতে থাকা সাদা-লাল জার্সিধারীদের দিকে দৌড়ে যান।
ম্যাচ শেষে আর্সেনাল স্ট্রাইকার আলেসিয়া রুসো বলেন, “আমরা শুরু থেকেই বিশ্বাস করেছিলাম, আমরা পারবো। আমাদের সামর্থ্য ছিল, শুধু সেটাকে কাজে লাগানো ছিল প্রশ্ন। আর আমরা সেটা করে দেখিয়েছি!”