‘মনোরঞ্জনের পাত্র হতে আসিনি’—প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ালেন ‘মিস ইংল্যান্ড’

New-Project-18-7.jpg

মিস ইংল্যান্ড মিলা ম্যাগি

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

এই বছর বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতা (মিস ওয়ার্ল্ড) অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভারতের হায়দরাবাদে। ১০ মে থেকে শুরু হওয়া এই আয়োজন শেষ হবে ৩১ মে। বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন আকলিমা আতিকা কণিকা। কে হবেন বিশ্বসুন্দরী—এই প্রশ্নে যেমন বিশ্বজুড়ে কৌতূহল, তেমনই এবার এই প্রতিযোগিতা খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে এক বিস্ময়কর ঘটনার জন্য।

প্রতিযোগিতার অন্যতম প্রতিযোগী, ইংল্যান্ডের প্রতিনিধি মিলা ম্যাগি হঠাৎ করেই প্রতিযোগিতা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ৭৪ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবার কোনো প্রতিযোগী নিজে থেকেই ‘মিস ওয়ার্ল্ড’-এর মতো একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে সরে দাঁড়ালেন। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে আয়োজকরা ‘ব্যক্তিগত কারণ’ বলেই ব্যাখ্যা দিলেও, পরে মিলা নিজেই জানিয়েছেন ভিন্ন ও গুরুতর এক কারণ।

“নিজেকে যৌনকর্মী মনে হচ্ছিল”— বিস্ফোরক মন্তব্য মিলার

মিলার অভিযোগ, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার নামে নারীদের শোষণ করা হচ্ছে। তাঁর ভাষায়, “নিজেকে যৌনকর্মী মনে হচ্ছিল। আমরা যেন বাঁদরের মতো, যাকে দড়ি টেনে নাচানো হয়। ঠিক সে ভাবেই আমাদের দিয়ে পারফর্ম করানো হচ্ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “আমি এখানে কারও বিনোদনের পাত্র হতে আসিনি।” প্রতিযোগীদের দিনের শুরু থেকেই চলত মেকআপ, একাধিক পোশাক বদল, ক্যাটওয়াকে হাঁটাহাঁটি। এসবই চলত সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। কিন্তু সবচেয়ে আপত্তিকর যেটি, তা হলো—বলা হচ্ছে, প্রতিযোগীদের ধনী পুরুষদের সামনে ‘উপস্থাপন’ করা হচ্ছিল।

মিলার অভিযোগ, “প্রত্যেক টেবিলে ছয়জন করে পুরুষকে বসানো হয়। আমাদের জোড়ায় জোড়ায় সেই টেবিলগুলোতে পাঠানো হয়, যেন আমরা ওদের মনোরঞ্জন করি। এই ব্যবস্থাকে আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারিনি।”

পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিলেন, ব্যর্থ হয়ে সরে দাঁড়ালেন

একজন পেশাদার লাইফগার্ড হিসেবে মিলা পুকুর বা সমুদ্রে ডুবে যাওয়া মানুষকে সিপিআর দিয়ে জীবন রক্ষা করেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি ‘মিস ইংল্যান্ড’ প্রতিযোগিতায় বিকিনি রাউন্ড বাতিল করে সেখানে ‘সিপিআর কুইন চ্যালেঞ্জ’ চালু করার মতো পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেই একই চেষ্টাই তিনি ‘মিস ওয়ার্ল্ড’-এ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে বলেই মনে করেন তিনি।

মিলার বক্তব্য, “আমি কিছু পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতার মধ্যে একটি মানবিক মূল্যবোধ থাকুক। কিন্তু বাস্তবে দেখি, প্রতিযোগিতা এখনো সেই পুরনো, লিঙ্গভিত্তিক শোষণের মডেলেই আটকে আছে। যা আমাকে এই মঞ্চ ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছে।”

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আলোড়ন

মিলার এই সাহসী সিদ্ধান্ত এবং স্পষ্ট বক্তব্য ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে কেউ সাহসী বলছেন, কেউ আবার সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার ‘বস্তাপচা মূল্যবোধ’ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তুলছেন।

এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—‘বিশ্বসুন্দরী’ প্রতিযোগিতা কি আসলেই নারী ক্ষমতায়নের প্রতীক, নাকি একবিংশ শতাব্দীতেও তা পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বাহক?

Leave a Reply

scroll to top