“চাহিদার চেয়ে বেশি গবাদি পশু গোমস্তাপুরে, বিক্রেতাদের আশাবাদ”

New-Project-1-3.png
মুহাম্মাদ নূরে আলম

আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরস্কার লাভের আশায় নির্ধারিত দিনে পশু জবাই করা — ইসলাম ধর্মে এক মহৎ ইবাদত। এই আত্মত্যাগ ও ভালোবাসার নিদর্শন হচ্ছে পবিত্র কোরবানি, যা প্রতিবছর ঈদুল আজহার মাধ্যমে ফিরে আসে। আর এই কোরবানিকে কেন্দ্র করেই গোমস্তাপুর উপজেলায় গরু ও অন্যান্য পশুর ব্যাপক সরবরাহ তৈরি হয়েছে, যা একদিকে যেমন স্থানীয় চাহিদা মেটাচ্ছে, তেমনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পশু সরবরাহে ভূমিকা রাখছে।

চলতি বছরে গোমস্তাপুরে কোরবানির জন্য মোট প্রস্তুতকৃত পশুর সংখ্যা ৪৫,১৬২টি, যার মধ্যে রয়েছে ১০,৫৯০টি ষাঁড়, ৮,২৪৯টি বলদ, ৭,০৪৪টি গাভী, ৫২টি মহিষ, ১৪,২০৬টি ছাগল এবং ৫,০২১টি ভেড়া। স্থানীয় পশু চাহিদা পূরণের পর অবশিষ্ট পশুগুলো ইতিমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বড় শহরের বাজারে সরবরাহের প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় খামারগুলোর অগ্রণী ভূমিকা

গোমস্তাপুর উপজেলার আটটি ইউনিয়নে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ টি ফার্ম রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব ফার্মে পশুগুলো লালন পালন করে বিক্রয়ের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার খামারিরা। গোমস্তাপুর উপজেলায় এসব ফার্মে দেশি গরুর পাশাপাশি বিদেশি জাতের গরুও লালন পালন করা হয়।

উল্লেখযোগ্য ফার্মগুলোর মধ্যে আশীর্বাদ ডেইরি ফার্ম, সরকার ডেইরি ফার্ম, মাসুদ ডেইরি ফার্ম, মমতাজ ডেইরি ফার্ম, চাঁপাই এগ্রো ডেইরি ফার্ম ও মোটা তাজাকরণ, মুসাব্বির ডেইরি ফার্ম ও নুহু ডেইরি ফার্ম উল্লেখযোগ্য।

এসব ফার্মে দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত যত্ন সহকারে গরুসহ বিভিন্ন পশুকে লালন পালন করা হয়। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতা নেওয়া হয়। এক একটি ফার্মে কম করে ২০টি থেকে প্রায় ৬০টি গরু থাকে।

এ প্রসঙ্গে কথা হলে হান্নান ডেইরি ফার্ম বহনপুরের মালিক জিয়াউর রহমান ২৪ঘণ্টা বাংলাদেশ’কে জানান, আমার ফার্মে ২৮টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ৭টি ষাঁড় বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ ষাঁড়গুলির এক একটি ওজন ৩ থেকে ৫ মন হতে পারে। দাম আশা করছি ১ লক্ষ ৫০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা‌ পেতে পারি।

গত বছরের তুলনায় এবার গো-খাদ্যের দাম তুলনামূলকভাবে যথেষ্ট বেড়েছে। যেমন ভুসি, গুঁড়া, খুদ, চাল ও ভুট্টার দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি। যার কারণে গবাদিপশু পালনে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। গরুগুলো আমি ঘাস ও দানাদার খাবার খাইয়ে প্রস্তুত করেছি। মোটা তাজাকরনের ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি গ্রহণ করিনি। আমি নিজেই আমার খামারের গরুগুলোকে দেখাশোনা করে থাকি। আশা করছি উপযুক্ত মূল্যে পশুগুলোকে বিক্রি করতে পারবো।

রহনপুর ইউনিয়নের বিশিষ্ট গরু ব্যবসায়ী নূহু আলম জানান, আমার খামারে যতগুলো গরু রয়েছে তন্মধ্যে ২৬টি ষাঁড় জাতীয় গরু কুরবানীর ঈদে বিক্রয়ের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। আমি খুব শীঘ্রই ষাঁড়গুলোকে নিয়ে বাজারজাত করণের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিব।

আশা করছি মহান আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে পশুগুলির ন্যায্য দাম পাবো। কুরবানীর পশু মোটাতাজাকরণ করার বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শ মোতাবেক পশুগুলোকে প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে।

খামারিরা বলছেন, ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে উপজেলার খামারগুলোতে কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে গো-খাদ্যের বাড়তি দামের কারণে তারা এসব পশুর প্রত্যাশিত মূল্য পাওয়া নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কার মধ্যে রয়েছে।

তারা বলছেন, প্রতি বছর গো-খাদ্য ভুষি, ধানের কুড়া, খৈল, খড়, ঘাসসহ গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে পশু পালনে যথেষ্ট হিমশিম খেতে হচ্ছে। খামারিরা আশঙ্কা করছেন প্রতিবছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চোরাই পথ দিয়ে ভারতীয় গরু প্রবেশ করে। যার ফলে দেশীয় খামারিরা যথেষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তবে খামারিরা আশা করছেন এবার তেমনটা হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কম।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ওয়াসিম আকরাম ২৪ঘণ্টা বাংলাদেশ’কে জানান, গোমস্তাপুর উপজেলায় গরুর খামারের সংখ্যা অনেক। তন্মধ্যে প্রায় ত্রিশটি খামারে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পশুগুলোকে বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

এজন্য আমরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে মাঝে মাঝে খামারীদেরকে নিয়ে উঠান বৈঠক করি অথবা ডেকে এনে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পশুগুলোকে মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করি।

এবার এ উপজেলায় ৪৫ হাজার ১৬২টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত, তার মধ্যে এ অঞ্চলের জনসাধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পশু কুরবানীর জন্য বরাদ্দ রেখে বাকি পশুগুলোকে খামারিরা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে উচ্চ দাম পাবার আশায় দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত গ্রহণ করছেন।

আমরা তাদের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তিনি আরো বলেন, উপজেলাবাসীর চাহিদা পূরণ ও দেশের বিভিন্ন স্থানে কুরবানীর পশুগুলোকে বিক্রয়ের উদ্দেশে প্রেরণ করার পরেও অতিরিক্ত পশু মজুদ থাকবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির মুন্সী ২৪ঘণ্টা বাংলাদেশ’কে জানান, ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে নানা কৌশলে ভারত  সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধভাবে পশু ঢুকতে না পারে সেজন্য বিজিবির সাথে বৈঠকের পাশাপাশি সীমান্ত এলাকাকে নজরদারিতে রাখা হ‌য়ে‌ছে। খামারিরা যাতে পশুর ন্যায্যমূল্য পায় সেজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব-ধরনের প্রস্ততি গ্রহণ করা হয়েছে

অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ:

দেশীয় খামারগুলো যদি সঠিকভাবে বাজারজাতকরণ করতে পারে এবং সরকার যথাযথ সহায়তা অব্যাহত রাখে, তাহলে পশু রপ্তানি বা আন্তঃজেলা সরবরাহের মাধ্যমে গোমস্তাপুর দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পশু উৎপাদনকেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। এটি স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন কর্মসংস্থান, আয় এবং ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করবে।

মুহাম্মাদ নূরে আলম

মুহাম্মাদ নূরে আলম

মুহাম্মাদ নূরে আলম (Muhammad Noora Alam) একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক ও কনটেন্ট বিশেষজ্ঞ, যিনি পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রিন্ট, অনলাইন এবং ডিজিটাল মিডিয়ায় কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ঢাকা পোস্ট, নয়াদিগন্ত, বিজনেস মিরর এবং শিরোনাম মিডিয়ার মতো প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমে সাব-এডিটর ও কনটেন্ট ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এনভিডিয়া ও দুবাই ওয়ান মিলিয়ন প্রমপ্টার্স থেকে জেনারেটিভ এআই ও প্রমপ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সনদপ্রাপ্ত। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পাঠকবান্ধব, প্রাসঙ্গিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রভাব ফেলতে সক্ষম কনটেন্ট তৈরিতে তার দক্ষতা অনন্য। ব্যবসা, প্রযুক্তি, সমাজ ও সমসাময়িক বিষয়ের উপর লেখালেখিতে তার পারদর্শিতা রয়েছে। পাশাপাশি তিনি ‘স্বপ্নবাজ ফাউন্ডেশন’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ‘রেঁনেসা ফাউন্ডেশন’-এর মিডিয়া প্রধান হিসেবে কাজ করছেন।

Leave a Reply

scroll to top