দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা: নিরাপদ ভবিষ্যতের পথে সময়োপযোগী একটি ক্যারিয়ার

New-Project-2-8.jpg

দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমিকম্প, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, অগ্নিকাণ্ড, ভূমিধস—প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট নানা দুর্যোগ আজকের পৃথিবীর এক অমোচনীয় বাস্তবতা। প্রতিনিয়ত এসব দুর্যোগে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ, হারিয়ে যাচ্ছে অমূল্য সম্পদ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজন দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও দূরদর্শী জনবল। সময়ের এই জরুরি চাহিদা পূরণে দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী একটি বিষয় হয়ে উঠেছে।

এই বিষয়ে পড়াশোনা করে যেমন মানবকল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ পাওয়া যায়, তেমনি গড়ে তোলা যায় একটি সম্মানজনক ও নিরাপদ ক্যারিয়ার। ব্যক্তি, সমাজ ও দেশের দুর্যোগ সহনশীলতা বাড়িয়ে আগামীর একটি সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ নির্মাণে এই বিষয়ের গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে।

কেন পড়বেন দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা?

অনেকে ভুলভাবে ধারণা করেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মানেই দুর্যোগের সময় ত্রাণ বিতরণ বা উদ্ধারকাজ। বাস্তবে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞান ও প্রক্রিয়া—যেখানে দুর্যোগের আগাম পূর্বাভাস, ঝুঁকি বিশ্লেষণ, প্রস্তুতি, প্রশমন, প্রতিক্রিয়া এবং পুনর্বাসনের প্রতিটি ধাপ নিয়েই গভীরভাবে কাজ করা হয়। এই বিভাগে শিক্ষার্থীরা ভূগোল, আবহাওয়া, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে দুর্যোগের আন্তঃসম্পর্ক বুঝতে শেখে, যা বাস্তব জীবনে কাজে লাগানো যায়।

কোথায় থাকছে চাকরির সুযোগ?

সরকারি খাত: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, সেনাবাহিনী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ নানা দপ্তরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দক্ষ জনবল প্রয়োজন হয়।

আন্তর্জাতিক সংস্থায়: জাতিসংঘ (UNDP, UNICEF, WHO, IOM), রেড ক্রস, জাইকা, বিশ্বব্যাংকসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু অভিযোজন, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা: ব্র্যাক, কেয়ার, ওয়ার্ল্ড ভিশন, সেভ দ্য চিলড্রেন, অ্যাকশন এইডসহ অনেক এনজিও নিয়মিতভাবে এই বিষয়ে দক্ষ পেশাজীবী নিয়োগ করে থাকে।

গবেষণা ও শিক্ষাক্ষেত্রেও সম্ভাবনা

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, গবেষণা কিংবা প্রশিক্ষণ পেশায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি করে দেশে-বিদেশে গবেষণাক্ষেত্রেও গড়ে তোলা যায় সুদৃঢ় ক্যারিয়ার।

মানবিকতা ও চ্যালেঞ্জের সমন্বয়ে অনন্য একটি পেশা

যারা সমাজের জন্য কিছু করতে চান, যারা চান একটি চ্যালেঞ্জিং কিন্তু অর্থবহ জীবন, তাদের জন্য দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা হতে পারে উপযুক্ত পথ। শুধু চাকরি নয়, এই পেশা দেয় মানবিকতা, দায়িত্ব ও নেতৃত্বের এক অপূর্ব মিশ্রণ।

একটি নিরাপদ, দুর্যোগ সহনশীল ও টেকসই ভবিষ্যৎ গঠনে যারা সত্যিই অবদান রাখতে চান—তাদের জন্য এই বিষয়টি হতে পারে একটি প্রেরণার নাম। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়ের চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে শিক্ষার্থীদের আগ্রহও।

Leave a Reply

scroll to top