বিদ্রোহীর জন্মদিনে বিদ্রোহীকে খুঁজি আমরা—প্রতিটি হৃদয়ের গভীরে

New-Project-21-6.jpg

কাজী নজরুল ইসলাম

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। তারিখটা ক্যালেন্ডারে নিছক আরেকটা দিন নয়, এটা ইতিহাসের বুকে জ্বলজ্বলে এক নক্ষত্রের আগমনের দিন। ১৮৯৯ সালের এই দিনে জন্ম নিয়েছিলেন সেই মানুষটি, যিনি শুধু কবি ছিলেন না, ছিলেন জাতির চেতনার মশাল, ছিলেন আগুনে ঝলসানো যুগের দ্রোহী সন্তান—কাজী নজরুল ইসলাম। এ যেন এক এমন দিন, যখন বাংলা শব্দেরা কান্নায় ভিজে যায়, বাতাসে ভেসে বেড়ায় বুলবুলির সুর আর বুকে বুকে বাজে—“আমি চিরবিদ্রোহী বীর!” তিনি নেই, কিন্তু তাঁর বেঁচে থাকার চিহ্ন ছড়িয়ে আছে আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাসে, প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি স্বপ্নে।

১৮৯৯ সালের এই দিনে চুরুলিয়ার মাটিতে যে শিশু জন্মেছিল, কেউ জানত না সে একদিন হয়ে উঠবে নিপীড়িতের মুখপাত্র, অগ্নির মত পোড়া পৃথিবীর আশার কবি। চোখে ছিল আগুন, কলমে ছিল বিদ্রোহ, বুকে ছিল ভালোবাসা। যে ভালোবাসা ধর্ম দেখে না, জাত দেখে না—মানবের চোখে চোখ রেখে বলে, “সবায় আমি প্রিয়”।

নজরুল কেবল কবি ছিলেন না, তিনি ছিলেন সময়ের সামনে দাঁড়ানো এক আয়না, যেখানে আমরা দেখতে পাই নিজেদের সাহস, ব্যথা আর স্বপ্নের প্রতিবিম্ব। তিনি ছিলেন এক যুদ্ধ—অবিচারের বিরুদ্ধে, দুঃখের বিরুদ্ধে, হিংসার বিরুদ্ধে। “মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই”—এই অনুরোধে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ধর্ম নয়, মানুষই তার ধর্ম।

আজ, যখন চারদিকে বিভাজন, হানাহানি, বিদ্বেষ—তখন তাঁর সেই সাম্যবাদের কণ্ঠস্বর আমাদের বুকে আবার কাঁপিয়ে তোলে। আজকের দিনে যদি নজরুল বেঁচে থাকতেন, হয়তো আকাশ কাঁপিয়ে বলতেন, “আমি মানবের গান গাই”।

আমরা কি পারি না তাঁর সেই গানকে আবার হৃদয়ে ফিরিয়ে আনতে?
আমরা কি পারি না একবার তাঁর কবিতার কাছে গিয়ে মাথা নিচু করে বলতে,
“তোমাকে ভুলিনি বিদ্রোহী কবি, তোমাকে এখনও খুঁজি, বুকের গভীরে…”?

আজ নজরুল নেই। আছে তাঁর সমাধি, আছে তাঁর গান।
আর আছে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে খচিত হয়ে থাকা একটি প্রশ্ন—
নজরুল, তুমি কি আজও বিদ্রোহে জ্বলে ওঠো, আমাদের চোখের জলে?

বিদ্রোহীর কাঁপন

নজরুল জন্মেছিলেন একদম সাধারণ পরিবারে। বাবাকে হারিয়েছিলেন শৈশবেই। দারিদ্র্য আর সংগ্রামের সাথে বড় হওয়া ছেলেটি নিজের জীবন দিয়ে শিখেছিলেন কতটা গভীর হতে পারে বঞ্চনার যন্ত্রণা, কতটা ভয়ানক হতে পারে অসমতার শেকল। সেই ব্যথাই একদিন হয়ে উঠল তাঁর কলমের বারুদ, তাঁর কণ্ঠের বজ্রনিনাদ।

যখন ভারতবর্ষ ছিল ব্রিটিশ শাসনের করাল গ্রাসে, যখন মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে ভয় পেত, তখন নজরুল লিখলেন—
“আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদচিহ্ন!”

তিনি শুধু শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেননি, বিদ্রোহ করেছিলেন সমাজের গোঁড়ামির বিরুদ্ধে, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে। আর তাই তাঁর লেখা আজও এতটা প্রাসঙ্গিক, এতটা জীবন্ত।

Leave a Reply

scroll to top