ছাত্র উপদেষ্টাদের সঙ্গে এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই: আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম

New-Project-20-5.jpg

এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে দলের সদস্যদের সাথে নাহিদ ইসলাম

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সম্প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে পড়েছে। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের সঙ্গে এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, “তারা যদি রাজনীতি করতে চায়, তাহলে সরকারের বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, সরকারে থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ গ্রহণযোগ্য নয়।

শনিবার (২৪ মে) দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “দুই ছাত্র উপদেষ্টা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়েছিলেন, আমিও তখন তাদের সঙ্গে ছিলাম। কিন্তু এখন তাদের যদি রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ইচ্ছা থাকে, তাহলে তা সরকারের ভেতরে থেকে সম্ভব নয়।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “দুই উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের এনসিপির সঙ্গে জড়িয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এটি তাদের হেয় করার একটি চেষ্টা। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

তবে নাহিদ আশা প্রকাশ করেন, গণঅভ্যুত্থানের বৈধতা ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ছাত্র উপদেষ্টাসহ সবাই একসঙ্গে কাজ করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

গঠনের পর থেকেই রানৈতিক টানাপোড়েনে এনসিপি

এনসিপি গঠনের পর থেকেই দলটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনে জড়িয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে এনসিপির বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথ গ্রহণ ইস্যুতে এনসিপি ও বিএনপির মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এনসিপির নেতারা বিএনপিকে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন, আর বিএনপি নেতারা এনসিপির নেতাদের ‘নাবালক’ ও ‘অর্বাচীন’ বলে সমালোচনা করেন।

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে এনসিপির সম্পর্কও শীতল হয়ে পড়েছে। উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ফেসবুক পোস্টে যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানোয় জামায়াত ও শিবিরের নেতারা ক্ষুব্ধ হন। এনসিপি পরে বিবৃতি দিয়ে একাত্তরের অবস্থান ব্যাখ্যা করার আহ্বান জানায়।

এনসিপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে এসেছে। দলের কিছু কেন্দ্রীয় নেতার পাল্টাপাল্টি ফেসবুক স্ট্যাটাস, বিশাল গাড়ির বহর নিয়ে নির্বাচনি এলাকা সফর এবং ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা অর্জনের প্রতিযোগিতা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। এনসিপির নেতারা অবশ্য এসব অভিযোগকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, বিভিন্ন অঙ্গন থেকে আসা নেতাকর্মীদের নিয়ে গঠিত হওয়ায় শুরুতে কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে, যা স্বাভাবিক।

এনসিপির যুব সংগঠন ‘জাতীয় যুবশক্তি’ সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করেছে। ‘মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশ ও নতুন বন্দোবস্তের লক্ষ্যে তারুণ্যের প্রত্যয়’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে।

এই পরিস্থিতিতে এনসিপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দলীয় ঐক্য বজায় রাখা এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করা। দলের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চাপ মোকাবিলা করে এনসিপি কীভাবে এগিয়ে যাবে, তা সময়ই বলে দেবে।

Leave a Reply

scroll to top