সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন আপাতত স্থগিত করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘আজ আদালতের রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসনের বিজয় হয়েছে। তাই আপাতত আন্দোলন স্থগিত করা হলো। অবিলম্বে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করা না হলে আবারও যমুনা ঘেরাও দেব।’ বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে আন্দোলনস্থলে এসে তিনি এ ঘোষণা করেন।
ইশরাক বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একটি গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক দল হিসেবে আইনের শাসনে বিশ্বাসী। হাইকোর্টের একটি আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দল আপাতত চলমান আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা সরকার ও তাদের কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর তাদের পদক্ষেপের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী কার্যক্রমের নির্দেশনা ঘোষণা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি আসার সময় আমাদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে এসেছি। হাইকোর্টে একটি ভুয়া রিট, বলা যায় সেই রিট দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে মেয়র পথে শপথ করানো থেকে বাধাগ্রস্ত করানোর একটা অপচেষ্টা করা হয়েছিল। সব শেষে আইনের শাসনের বিজয় হয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
এসময় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ইশরাক হোসেন বলেন, আমরা যেহেতু আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আমরা আশা রাখব বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার আর একদিনও কালক্ষেপণ না করে, অবিলম্বে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে তাদের আগামী দিনের এজেন্ডা জনগণের কাছে ফুটিয়ে তুলে ধরবে। আজকে যেহেতু আমরা রায়টি পেয়েছি, যদি সরকার আবারও তালবাহানা করে, তাহলে কালকে সকালে আমরা আবার এখানে এসে ঘেরাও দেব।
বিএনপির তরুণ এই নেতা আরও বলেন, এই কর্মসূচির ফলে চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়, জনগণ দুর্ভোগে পড়ে। রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকে। সেটার জন্য আমাদের নেতা বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং আমি সাধারণ জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। শুরুতে কিন্তু আমাদের আন্দোলনের পরিকল্পনা ছিল না। সরকারের কালক্ষেপণের কারণে আমরা আন্দোলন করতে বাধ্য হই।
গতকাল আমি বলেছিলাম, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভেতরে যে দুজন ছাত্র উপদেষ্টা রয়েছে, তারা একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সমর্থক এবং সরাসরি সংগঠক হিসেবে কাজ করছে। তাদের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন শেষ হবে না, এই ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমি আমার ঘোষণাকে পুনর্ব্যক্ত করতে চাই, তাদের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
এর আগে, গতকাল বুধবার সকাল থেকে ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে কাকরাইলে অবস্থান নেন তার সমর্থকরা। তারা সারারাত সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
আজ দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিএনপি নেতাকর্মীরা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। একই সঙ্গে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবি করছেন। এসময় যমুনারে যমুনা আমরা কিন্তু যাব না, এই মাত্র খবর এলো ইশরাক ভাই মেয়র হলো, এই মুহূর্তে দরকার নির্বাচিত সরকার, দফা এক দাবি এক নির্বাচিত সরকার, যমুনারে যমুনা শপথ ছাড়া যাব না— বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ইশরাককে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। এরপর নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক। ২৭ মার্চ ২০২৫-এ, মামলাটির রায় প্রদান করেন ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম। রায়ে শেখ ফজলে নূর তাপসের মেয়র পদে বিজয় বাতিল করা হয় এবং ইশরাক হোসেনকে প্রকৃত বিজয়ী ও বৈধ মেয়র হিসেবে ঘোষণা করা হয়।