ভারতের নিষেধাজ্ঞা সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চাইবে ঢাকা

New-Project-23.png

আমদানি বিধিনিষেধ নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চাইবে ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশি পোশাকসহ কিছু পণ্য স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞায় কোনো পাল্টা পদক্ষেপ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা। দুই দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের আলোচনায় এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চাওয়া হবে। ভারতের আমদানি বিধিনিষেধ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত জরুরি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (২০ মে) মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে বাণিজ্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে পোশাক পণ্যসহ বেশ কিছু পণ্য ভারতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ভারতের নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে আমরা কোনো ধরনের পাল্টা কর্মসূচি নেব না। তারা (ভারত) এটি করেছে, আমরা তাদের সঙ্গে ‘এনগেইজড’ হব।

এসময় এ ধরনের নিষেধাজ্ঞাকে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করেন বাণিজ্য সচিব। তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে একটি বৈঠক আয়োজন করা হবে। সেখানে সুরাহার পথ বের হবে বলে তাঁর আশা করা হচ্ছে। বৈঠক আয়োজনের জন্য ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, উভয় দেশের ব্যবসা-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে ‘জয়েন্ট বিজনেস প্লাটফর্ম’ রয়েছে। এর আওতায় ব্যবসা সংক্রান্ত বাধাগুলো আলোচনার পর দূর করার উদ্যোগ নেয় উভয় দেশ।

উক্ত বৈঠকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, গত শনিবার সব স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করার আদেশ জারি করেছে ভারত। এর বাইরে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের সব শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পানীয়, ফার্নিচার, প্লাস্টিক পণ্যসহ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটি। এসব পণ্য পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়িয়া স্টেশন থেকেও রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়।

স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ কিছু পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞায় দুই দেশের বাণিজ্যে নতুন করে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা ভারতের সিদ্ধান্তকে অশুল্ক বাধা হিসেবে দেখছেন।

তাদের মতে, ভারতের এ সিদ্ধান্তে সে দেশের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি কমবে। অন্যদিকে বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানিও প্রভাবিত হবে। ভারতে বাংলাদেশ রপ্তানি করে যে পরিমাণ আয় করে, তার বিপরীতে ভারতের রপ্তানি পাঁচ গুণ। ফলে এই নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের চাইতে ভারতের সমস্যাই বেশি হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, ভারত থেকে বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে, তার তুলনায় রপ্তানি খুবই কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে ঢাকা। এর বিপরীতে ভারতে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় তৈরি পোশাক। গত অর্থবছরে ভারতে ৫৪ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য, ৩ কোটি ১৩ লাখ ডলারের তুলা ও তুলার সুতার ঝুট এবং ৬৫ লাখ ডলারের আসবাব রপ্তানি হয়।

এসব পণ্য বেশির ভাগ রপ্তানি করা হতো স্থলবন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

Leave a Reply

scroll to top