সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে পানি বাড়লেও বন্যার শঙ্কা নেই

New-Project-20.png

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুনামগঞ্জ এবং সীমান্তবর্তী ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ স্থানীয় হাওর ও নদ-নদীতে পানির স্তর বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীসহ অন্যান্য জলাশয়েও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার অনেক নিচে অবস্থান করছে। ফলে আপাতত কোনো বন্যার শঙ্কা নেই।

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বন্যার তথ্য এবং বিগত বছরের অভিজ্ঞতায় সুনামগঞ্জের নদীতীরবর্তী ও হাওরাঞ্চলের মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষক ফরিদ আলী বলেন, হাওরে ধান কাটা শেষ। এখন পানি এলে সমস্যা নেই, কিন্তু বন্যা হলে তো কষ্ট বাড়বে। ঘরে ধান তুলেছি, ঘরটাও ঠিক করার দরকার ছিল, কিন্তু বৃষ্টির কারণে কিছুই করতে পারছি না। পানির খবর শুনলেই এখন ভয় লাগে।

সুরমা নদীর তীরবর্তী বড়পাড়ার গৃহবধূ সুরেজান বিবি বলেন, আমার ঘর নদীর একদম পাশে। প্রতিবছর বন্যা হলে পানি ঢুকে পড়ে, পানি বাড়ছে দেখে ভয় পাচ্ছি। যে পরিমাণ বৃষ্টি শুরু হয়েছে, রাতে চিন্তায় ঘুম আসে না। কখন জানি পানি এসে সব তলিয়ে যায়।

তবে স্থানীয় অনেকেই বলছেন—এই পানি হাওরের জন্য আশীর্বাদ। বৃষ্টির পানির কারণে হাওর জীবন্ত হয়ে ওঠে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামের মুসা মিয়া বলেন, বর্ষায় ধীরে ধীরে যখন হাওরে পানি বাড়ে, তখনই আমরা মাছ ধরার জাল, ফাঁদ তৈরি করি। এই সময়টায় মাছ বিক্রি করে সংসার চালাই, অনেকে দেনা-পাওনাও মিটাই। হাওরের পানিতে এখন কৈ, টেংরা, শিং, চিংড়িসহ অনেক ধরনের দেশি মাছ ওঠে। এসব মাছ বাজারে ভালো দামে বিক্রি হয়। তাই আমরা চাই পানি আসুক, কিন্তু এই পানি বেড়ে যেন বন্যা না হয়।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ গ্রামের ইদ্রিস মিয়া বলেন, ফেসবুকে খালি পানির খবর দেখি। কিন্তু হাওরে পানি একটু একটু করে ঢুকছে। খুব বেশি পানি নেই, যা আছে তা স্বাভাবিক পানি। বরং এই পানিতে আমরা মাছ পাব, জীবিকা চলবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার গণমাধ্যমকে বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জি ও সুনামগঞ্জে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তা বর্ষা মৌসুমের স্বাভাবিক চিত্র। এই বৃষ্টির কারণে নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে, তবে তা বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। আমাদের হাওরে পানি ধারণের যথেষ্ট জায়গা আছে, হাওর পরিপূর্ণ হতে আরও ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগবে।

তিনি আরও বলেন, সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো তথ্য সঠিক নয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী তিন দিনের মধ্যে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার কোনো সম্ভাবনা নেই। একইসঙ্গে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে, তারা নিয়মিতভাবে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। যদি কোনো কারণে পরিস্থিতির অবনতি হয় বা বন্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়, তাহলে আগাম সতর্কবার্তা জারি করা হবে যাতে সাধারণ মানুষ প্রস্তুতি নিতে পারে।

Leave a Reply

scroll to top