দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখলে যেসব সমস্যা হতে পারে

New-Project-19.png

দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখলে যে ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এমন কিছু অভ্যাস নিজের অজান্তেই বাসা বাঁধে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর মধ্যে অন্যতম হলো- প্রস্রাব আটকে রাখা। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেকেই এই সমস্যায় ভোগেন। সময়ের অভাবে হোক বা সামাজিকতার কারণে, আমরা প্রায়শই প্রস্রাবের বেগ এড়িয়ে যাই। যদিও আমরা জানি এই অভ্যাস শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, তবুও অনেকেই একে গুরুত্ব দেন না। যদি আপনি নিয়মিত প্রস্রাব আটকে রাখার অভ্যাস চালিয়ে যান, তবে আপনাকে কিছু গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখোমুখি হতে হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কী কী বিপদ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। যেমন: জ্বর, প্রস্রাবের সময় ব্যথা করা, কিডনিতে পাথর, তলপেটে ব্যথা, মূত্রাশয় ফুলে যাওয়া এবং ক্যানসার ইত্যাদি।

দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখলে প্রস্রাবে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া শরীর থেকে বের হতে পারে না, এর ফলশ্রুতিতে জ্বর আসার সম্ভাবনা থাকে। দীর্ঘসময় ধরে প্রস্রাব আটকে রাখার ফলে প্রস্রাবের সময় তীব্র ব্যথা হতে পারে। পানি কিডনিকে পরিষ্কার করে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখার ফলে কিডনির উপর মারাত্মক প্রভাব পরে, ফলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখলে তলপেটে তীব্র থেকে মাঝারি ধরণের ব্যথা হয়। আপনি যখন পানি পান করেন তখন মূত্রাশয় আস্তে আস্তে পরিপূর্ণ হতে থাকে। তাই যখন এই পানি মূত্র হিসেবে শরীর থেকে বের হয়ে না যায় তখন মূত্রথলি ফুলে যায়। এর চিকিত্‍সা করা না হলে মূত্রাশয় ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।

সাধারণত, নারীদের জীবনে মূত্রনালীর সংক্রমণ একটি প্রচলিত সমস্যা। পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ৫০ শতাংশেরও বেশি নারী তাদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার এই সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়েন। তবে, শুধু নারীরাই নন, শিশু ও বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রেও এই ঝুঁকি একেবারেই কম নয়। কিছু সচেতনতা ও সতর্কতা এই সংক্রমণ থেকে আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে।

মানবদেহের কিডনিতে প্রস্রাব তৈরি হয়, সেখান থেকে এটি জমা হয় মূত্রাশয় বা মূত্রস্থলীতে। সেখান থেকে একটি সরু নালী – মূত্রনালী দিয়ে দেহ থেকে বার হয়। মূত্রস্থলী থেকে বেরোবার মুখে মূত্রনালীর চারিদিক পেশী দিয়ে ঘেরা থাকে (অনেকটা আংটির আকারে)। পুরুষদের ক্ষেত্রে মূত্রনালী প্রস্টেটের মধ্যে দিয়েও যায়। মূত্রস্থলী যখন প্রস্রাবে পূর্ণ হয়ে যায়, তখন যতক্ষণ না পর্যন্ত নার্ভের মারফতে সংকেত আসে যে ততক্ষণ ঘিরে থাকা পেশী শক্ত হয়ে মূত্রনালীর ফুটো চেপে বন্ধ করে রাখে এবং মূত্রস্থলী ঢিলে বা শিথিল অবস্থায় থাকে।

মূত্রথলি প্রস্রাবে পরিপূর্ণ থাকলেও তা নিজে থেকে কখনো বাইরে চলে আসে না। এই প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কের সংকেত দ্বারা। যখন আমরা প্রস্রাব করার সিদ্ধান্ত নিই, তখন স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে মূত্রথলিতে একটি সংকেত যায়, যার ফলে মূত্রথলির পেশিগুলো সংকুচিত হতে শুরু করে। একই সময়ে, মূত্রনালীকে ঘিরে থাকা পেশিগুলো শিথিল হয়ে যায়, যার ফলে প্রস্রাব অবাধে বেরিয়ে আসে এবং মূত্রথলি খালি হয়।

প্রস্রাব ঝড়া

এটি সাধারণত দেহের মূত্রনালি, মূত্রথলির ইত্যাদি অস্বাভাবিকতার কারণে হতে পারে। এছাড়া, শারীরিক চাপ, ইনফেকশন, স্নায়ুযন্ত্রের রোগের কারণে অথবা মূত্রথলির সম্প্রসারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায়, মূত্রথলি বেশি বিস্তৃত হওয়ার ফলে প্রস্রাব ঝরতে পারে। অন্যদিকে মহিলাদের জরায়ু নিচে নেমে যাওয়া, কিংবা পুরুষদের প্রস্টেটগ্রন্থি অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে গেলে, দেহের বস্তি দেশ বা পেলিভিসে টিউমার কিংবা ইনফেকশন হলেও এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যেহেতু সমস্যাটা বেশ কিছু ভিন্ন ভিন্ন কারনে হয়ে থাকে। প্রথমে বের করতে হবে, কেন এই সমস্যাটা হচ্ছে। তার জন্য মূত্রপরীক্ষা, পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্টেট পরীক্ষা ও অন্যান্য আরও কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই ওষুধ, ব্যায়াম, কিংবা সার্জারি করে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তাই এই সমস্যা নিয়ে বসে থাকা উচিৎ নয়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ

বিশেষ করে চা, কফি, কোমল পানীয়, অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা উত্তম। প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে বাথরুমে গিয়ে প্রস্রাব করে আসুন। মনে রাখবেন, প্রস্টেটের সমস্যায় হঠাৎ করে এ থেকে প্রস্রাব আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। ওজন কমান। অতিরিক্ত ওজন সমস্যা জটিল করে তুলবে। ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করুন। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ডায়াবেটিসজনিত স্নায়ুবৈকল্য এই সমস্যার জন্য দায়ী হতে পারে।

পুরুষদের যে প্রস্রাবে সংক্রমণ হয় না, তা নয়। প্রস্রাবের নিয়ন্ত্রণহীনতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া, জ্বালাপোড়া, তলপেটে অস্বস্তি হলে প্রস্রাব কালচার করা উচিত। বেশি করে পানি পান করলে প্রস্রাবে সংক্রমণ এড়ানো যায়—কথাটা সব সময় ঠিক নয়। তবে প্রস্রাব আটকে রাখলে বা প্রস্রাব একবারে সম্পূর্ণ না হলে বা মূত্রাশয়ে জমে থাকলে তাতে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।

Leave a Reply

scroll to top