সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ক্যাম্পাসের দুই সাংবাদিকসহ ৪ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার (১৭ মে) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলায় পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন দুই পক্ষ।
নারী শিক্ষার্থীর অভিযোগ
সংবাদ সম্মেলনে ওই ছাত্রী জানান, পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য তিনি ওই শিক্ষকের চেম্বারে পড়তে গিয়েছিলেন। স্যার ব্যস্ত থাকায় দুপুরের বদলে বিকেলে যান এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এ সময় কয়েকজন হঠাৎ চেম্বারে ঢুকে পড়েন। তারা তার শরীরে হাত দিলে ওড়না পড়ে যায় এবং ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়।
ছাত্রী দাবি করেন, তাকে ভিডিও ধারণের ভয় দেখিয়ে টেবিলের নিচে লুকাতে বাধ্য করা হয়। পরে বেরিয়ে যেতে বললে তিনি মাথায় গামছা জড়িয়ে বের হন। অভিযুক্তরা প্রথমে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে, পরে শিক্ষক নিরাপত্তার কথা ভেবে জুবেরী ভবনের সামনে এক লাখ টাকা দেন এবং পরদিন আরও দুই লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন।
তার অভিযোগে নাম উঠে আসে চার শিক্ষার্থীর—কালবেলার রাবি প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন সজীব, খবরের কাগজের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম সুমন, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব এবং আইবিএ বিভাগের ছাত্র ও ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ।
অভিযুক্তদের বক্তব্য
অভিযোগ অস্বীকার করে বেলা ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করেন সাজ্জাদ ও সুমন। তারা বলেন, ১১ মে সন্ধ্যায় এক শিক্ষক থেকে জানতে পারেন, হেদায়েত উল্লাহ নামের এক শিক্ষক চেম্বারে এক ছাত্রীসহ অবস্থান করছেন। প্রক্টরের অনুমতিক্রমে তারা সেখানে যান। চেম্বারে প্রবেশ করলে লাইট বন্ধ দেখতে পান এবং টেবিলের নিচে ছাত্রীকে লুকিয়ে থাকতে দেখেন।
তাদের দাবি, স্যারের অনুরোধ এবং ছাত্রীর আত্মহত্যার হুমকির কারণে ভিডিওটি বা কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে উপাচার্য ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু এক পর্যায়ে ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যার জন্য তারা দায়ী নন বলে দাবি করেন।
সাজ্জাদ ও সুমন বলেন, ঘটনার সত্যতা আড়াল করতে শিক্ষক ও ছাত্রী তাদের বিরুদ্ধে অর্থ লেনদেন ও গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। তাদের দাবি, কোনো ধরনের টাকা আদান-প্রদান হয়নি, বরং তারা একটি অনৈতিক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতিবাদ চেয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে কর্তৃপক্ষ এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ঘটনাটি নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে তীব্র আলোচনা ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে।