মাগুরার চাঞ্চল্যকর শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় দিয়েছেন আদালত। শনিবার (১৭ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এই রায় ঘোষণা করেন। মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অপর তিন আসামি—সজীব শেখ, তার ভাই রাতুল শেখ ও তাদের মা রোকেয়া বেগমকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
১৩ মার্চ সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আছিয়া
২০২৪ সালের ৬ মার্চ মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আট বছরের শিশু আছিয়া ধর্ষণের শিকার হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৩ মার্চ ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আছিয়া। এর আগে প্রথমে তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল এবং পরে ফরিদপুর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটায় নেওয়া হয় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।
ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির মা আয়েশা আক্তার ৮ মার্চ শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখ, শাশুড়ি জাহেদা বেগম, বোন জামাই সজিব শেখ এবং সজিবের বড় ভাই রাতুল শেখকে আসামি করে মাগুরা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় অভিযুক্ত ৪ আসামিই পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। তাদের উপস্থিতিতেই চলছে বিচারিক কার্যক্রম।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন গত ১৩ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট জমা দিলে ২০ এপ্রিল মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান মামলাটি আমলে নিয়ে চার্জগঠনের জন্য ২৩ এপ্রিল তারিখ নির্ধারণ করেন। চার্জ গঠনের পর ২৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয় মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ; শেষ হলো ৭ মে বুধবার ঢাকা মেডিকেলের দুই ডাক্তারের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে।
অপরাধ স্বীকার করেছেন প্রধান আসামী হিটু শেখ
মামলার মূল আসামি হিটু শেখ পুলিশের রিমান্ডে থাকা অবস্থায় ১৫ মার্চ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন, যেখানে তিনি একাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানান। পরে পুলিশ ১৩ এপ্রিল চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২৯ জন সাক্ষ্য দেন। টানা ১২ কার্যদিবসে সাক্ষ্য ও যুক্তিতর্ক সম্পন্ন করে ১৭ মে রায়ের দিন নির্ধারণ করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান, আসামির স্বীকারোক্তি, মেডিকেল প্রতিবেদন এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষ্যে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।
পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, “আসামির দোষ প্রমাণে যে পরিমাণ তথ্য ও প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা একে একটি দৃষ্টান্তমূলক মামলায় পরিণত করেছে। আদালতের এই রায় শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে একটি শক্ত বার্তা দেবে।”
প্রসঙ্গত, ৬ মার্চ ঘটনার দিন থেকে গণনা করলে ৭৩ দিনের মাথায় আজ এ মামলার রায় ঘোষণা হচ্ছে। এর মধ্যে তদন্ত শেষে পুলিশ ৩৭ দিনের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।