এনবিআর বিলুপ্তির প্রতিবাদে উত্তপ্ত রাজস্ব অঙ্গন: কর্মকর্তাদের তীব্র ক্ষোভ

New-Project-47-1.jpg
২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ জারির প্রতিবাদে সারাদেশের এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রাজস্ব খাতের এই আকস্মিক রদবদলে অসন্তুষ্ট কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন, একটি সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠানকে গোপনে ভেঙে দিয়ে প্রশাসনিক কর্তৃত্বের হাতে সোপর্দ করার মাধ্যমে রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে সংকটের মুখে ফেলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মে গভীর রাতে সরকার এক গেজেটের মাধ্যমে এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ—রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ—সৃষ্টির নির্দেশনা দেয়। সরকারের ভাষ্য মতে, এই পদক্ষেপ দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে এবং এতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। কিন্তু এনবিআরের ভেতরে এবং অর্থনৈতিক অঙ্গনে এই সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক।

“এনবিআর ধ্বংস নয়, সংস্কারের নামে ষড়যন্ত্র”— কর্মকর্তাদের অভিযোগ

‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’-এর এক মুখপাত্র বলেন, “এই ‘নিশিরাতের অধ্যাদেশ’ সরাসরি একটি প্রতিষ্ঠানের বিলুপ্তি এবং প্রশাসনিক কর্তৃত্ব কাঠামোর উপর রাজস্ব খাতের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার স্পষ্ট উদাহরণ। আইএমএফ কিংবা দাতাসংস্থাগুলোর সুপারিশ থাকলেও, এনবিআরকে বিলুপ্ত করার কোনো নির্দেশনা সেখানে ছিল না।”

ঢাকা কাস্টমস হাউসের এক সিনিয়র কর কর্মকর্তা বলেন, “পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা রাষ্ট্রের রাজস্বের মূল জোগান দিয়ে আসছি। অথচ আমাদের মতামত না নিয়ে, আমাদের অভিজ্ঞতা অগ্রাহ্য করে পুরো কাঠামোই আমলাদের হাতে তুলে দেওয়া হলো। এর পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে।”

আরও এক কর কর্মকর্তার ভাষ্য, “গোপনে অধ্যাদেশ প্রণয়ন, ছুটির দিনে মিটিং, রাতের আঁধারে গেজেট প্রকাশ—এসবের মধ্যেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ স্পষ্ট।”

সরকারের ব্যাখ্যা: দক্ষতা বাড়াতে বিভাজন

সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এসব অভিযোগ খণ্ডন করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, “এটি এনবিআর বিলুপ্তির কোনো উদ্যোগ নয়। বরং রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা পৃথক করা হয়েছে। এতে রাজস্ব আদায়ে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।”

সংস্কার প্রতিবেদন নিয়েও প্রশ্ন

এই সংস্কারের জন্য গঠিত ‘এনবিআর সংস্কার কমিটি’র প্রতিবেদন এখনো জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, তাদের প্রস্তাবনাগুলো আংশিকভাবে উপেক্ষা করে ভিন্নধারায় গোপনে অধ্যাদেশটি পাশ করা হয়েছে। এনবিআরের কর্মকর্তাদের দাবি—সংস্কারের নামে কারা এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে, তা খুঁজে দেখা জরুরি।

আন্দোলনের ভবিষ্যৎ

‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ জানিয়েছে, দাবি আদায় না হলে তারা ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে বাধ্য হবেন। আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ আগামী বাজেট ঘোষণার সময় ঘিরেই নতুন মোড় নিতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

কলম বিরতি কর্মসূচি:

বুধবার: সকাল ১০টা – দুপুর ১টা

বৃহস্পতিবার ও শনিবার: সকাল ১০টা – বিকেল ৩টা
ছাড় দেওয়া হয়েছে:

♦ আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা

♦ রপ্তানি কার্যক্রম

♦ জাতীয় বাজেট প্রস্তুতির কাজ

সংক্ষিপ্ত মূল দাবি:

  • নিশিরাতে জারি করা অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে

  • এনবিআর বিলুপ্তির প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে

  • রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট ক্যাডারদের মতামত ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে

  • প্রশাসনিক ক্যাডারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা বন্ধ করতে হবে

আন্দোলনের নেতৃত্বে:

“এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ” — কাস্টমস ও ট্যাক্স বিভাগসহ এনবিআরের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে গঠিত একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম।

ভবিষ্যতের গতিপথ:

বিশ্লেষকদের মতে, এই আন্দোলনের গতি ও পরিণতি আগামী বাজেট ঘোষণার সময়কে কেন্দ্র করে নতুন মোড় নিতে পারে। সরকার দাবি মেনে নেয় কি না, সেটিই এখন মূল প্রশ্ন।

Leave a Reply

scroll to top