চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন কাল, ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ

New-Project-31-3.jpg

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ চবি প্রতিনিধি

আগামীকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বহুল প্রতীক্ষিত পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। এদিকে সমাবর্তনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

দীর্ঘ ৯ বছর পর হতে যাওয়া এই সমাবর্তনে অংশ নেবেন প্রায় ২৩ হাজার গ্র্যাজুয়েট। এর মধ্যে ২২ জন পিএইচডি ও ১৭ জন এমফিল ডিগ্রিধারী রয়েছেন। এই সমাবর্তন বিশ্বের ইতিহাসে একক কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সমাবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

জানা গেছে, প্রতিবছর সমাবর্তন হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠার ৫৯ বছরে চবিতে মাত্র চারবার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনেকদিন পর হওয়ায় এবারের সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশি। অনুষদভিত্তিক অংশগ্রহণের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ। এই অনুষদের ৪৯৮৭ জন গ্র্যাজুয়েট সমাবর্তনে অংশ নেবেন। এছাড়া ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ৪৫৯৬ জন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ৪১৫৮ জন ও বিজ্ঞান অনুষদের ২৭৬৭ জন গ্র্যাজুয়েট সমাবর্তনে অংশে নেবেন। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অতিথিসহ প্রায় ২৫ হাজার মানুষের জন্য প্রস্তুত হয়েছে সমাবর্তন প্যান্ডেল।

আগামীকাল বুধবার (১৪ মে) দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান। সমাবর্তনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ও চবির সাবেক শিক্ষক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এসময় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান ও শিক্ষা উপদেষ্টা অংশগ্রহণ করবেন। এ সুবিশাল আয়োজনে সভাপতিত্ব করবেন চবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।

অংশগ্রহণকারীদের যা জানা প্রয়োজন

অংশগ্রহণকারী গ্র্যাজুয়েটরা সোম ও মঙ্গলবার (১২ ও ১৩ মে)।বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস চলাকালীন (সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত) সমাবর্তনের গাউন সংগ্রহ করতে পারবেন। সমাবর্তনের দিন সকাল ৭টা থেকে বাকি গাউন দেওয়া হবে।

বুধবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টার মধ্যে বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউট থেকে সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীরা খাবার সংগ্রহ করবেন। তাদের প্রত্যেককে ব্যাগ, স্মরণিকা, কলম, পিন, মোবাইল ওয়ালেট দেওয়া হবে।

সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ইন্সটিটিউট বুথে গাউন ফেরত দিয়ে মূল সনদ ও উপহার সামগ্রী সংগ্রহ করা যাবে।

সমাবর্তনের দিন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। শিক্ষার্থীদের সিঙ্গেল লাইনে সমাবর্তনস্থলে প্রবেশ করতে হবে এবং দুপুর ১টার পর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। অতিথি বাদে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর ফটকে থাকবে পার্কিং ও বাস ট্রান্সফারের ব্যবস্থা। যাতায়াতের জন্য শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ছাড়বে ১০০টি বিশেষ বাস। চলবে ৪টি বিশেষ শাটল ট্রেন। ক্যাম্পাসে অভ্যন্তরীণ চলাচলের জন্য থাকবে শাটল বাস সার্ভিস।

অনুষ্ঠান সূচি

অনুষ্ঠান শুরু হবে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে অতিথিদের আসন গ্রহণের মাধ্যমে। এরপর ১টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে সমাবর্তন শোভাযাত্রা। বিকেল ২টা থেকে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হবে এবং ২টা ৫ মিনিটে পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করা হবে। ২টা ১৫ মিনিটে সমাবর্তনের সভাপতি ও ভাইস-চ্যান্সেলর সমাবর্তনের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। পরবর্তী সময়ে ২টা ১৬ মিনিটে উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন।

এরপর বিকেল ২টা ২০ মিনিটে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে এবং ২টা ৩০ মিনিটে উপাচার্য বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান করবেন। ৩টা থেকে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করবেন। এরপর যথাক্রমে ইউজিসি চেয়ারম্যান (৩টা ৫ মিনিট), শিক্ষা উপদেষ্টা (৩টা ১০ মিনিট) এবং সমাবর্তন বক্তা (৩টা ১৫ মিনিট) বক্তব্য প্রদান করবেন। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হবে। এরপর ৩টা ৫০ মিনিটে সভাপতি তার বক্তব্য প্রদান করে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করবেন। অনুষ্ঠান শেষ হবে ৪টা থেকে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও ৪টা ১ মিনিটে সমাবর্তন বক্তার প্রস্থান করার মাধ্যমে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি

সমাবর্তন উপলক্ষে খরচ হবে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ৬ কোটি টাকা এসেছে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ফি থেকে। বাকি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি ও স্পন্সরদের থেকে নেওয়া হবে। সমাবর্তন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। যারা মূল অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না, তাদের জন্য ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার, জারুলতলা, সায়েন্স ফ্যাকাল্টি চত্বরসহ পাঁচটি স্থানে থাকবে এলইডি স্ক্রিনে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা। এরইমধ্যে সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় সাজছে নতুন করে। পুরো ক্যাম্পাস কে ঢেলে সাজানো হয়েছে। পরিচ্ছন্নতার আওতায় আনা হয়েছে রাস্তাঘাট, ক্যান্টিন, হল ও ফ্যাকাল্টি। বিভিন্ন আলপনা ও রঙ দিয়ে সাজানো হয়েছে সবকিছু।

সমাবর্তন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী জানান, “একক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি দেশের সবচেয়ে বড় সমাবর্তন। সবাই নিয়মতান্ত্রিকভাবে এতে অংশ নিবেন, এটাই প্রত্যাশা। এছাড়া জরুরি নির্দেশনাগুলো সমাবর্তনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে পাবেন সমাবর্তী শিক্ষার্থীরা।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “৫৮ বছরের ইতিহাসে মাত্র চারটি সমাবর্তন হয়েছে। এবার আমরা ইতিহাস গড়তে যাচ্ছি। একই সমাবেশস্থলে এতো শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে সমাবর্তন বিশ্বের ইতিহাসে এটিই হবে প্রথম।”

Leave a Reply

scroll to top