দেশের বিভিন্ন জেলায় বজ্রপাত ও কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১২ জন। রোববার (১১ মে) বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে কৃষক, কলেজ শিক্ষার্থী, দিনমজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। দুর্ঘটনার শিকারদের বেশির ভাগই মাঠে ধান কাটার সময় বা খোলা জায়গায় অবস্থান করছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সর্বোচ্চ ৫ জনের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও আখাউড়া উপজেলায় বজ্রপাতের ঘটনায় পাঁচজন প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে তিনজন নাসিরনগরের এবং দুজন আখাউড়ার বাসিন্দা। তারা কৃষিকাজে ব্যস্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। এছাড়া নাসিরনগরে হামিদা বেগম (৪০) নামে এক নারী বজ্রাঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন, চাঁনপুর গ্রামের কৃষি শ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক (৩৫), গোকর্ণ গ্রামের মো. শামসুল হুদা (৬৫), কচুয়া গ্রামের শিশু জাকিয়া (৭), রুটি গ্রামের কৃষক সেলিম মিয়া (৬০) ও বনগজ গ্রামের যুবক জাকির খাঁ (২২)।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ জানিয়েছে, খোলা মাঠে অবস্থান ও সচেতনতার অভাব এই প্রাণহানির অন্যতম কারণ।
কিশোরগঞ্জে কলেজছাত্রসহ নিহত ৩
কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও কুলিয়ারচরে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। তারা হলেন—ফারুক মিয়া (৬০), ফয়সাল মিয়া (২৮) ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র কবির হোসেন (১৭)। তারা সবাই জমিতে ধান কাটতে বা খড় আনতে গিয়েছিলেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় আরও একজন আহত হন, তবে তার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল।
শেরপুরে ধান কাটতে গিয়ে কৃষকের মৃত্যু
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান খবির উদ্দিন (৪৫)। আহত হয়েছেন সকুল (২০) নামে আরও এক শ্রমিক। বিকেলে হঠাৎ বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাতে ধান কাটার শ্রমিক নিহত
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পৌর এলাকার নয়াগোলা-বুলনপুরে বজ্রপাতে মৃত্যু হয় আব্দুল কাইয়ুম (৫৫) নামে এক কৃষি শ্রমিকের। ধান কাটার সময় বজ্রপাতের শিকার হন তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ময়মনসিংহে কালবৈশাখীতে দুইজনের মৃত্যু
ময়মনসিংহে কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে গাছ উপড়ে পড়ে দুইজন নিহত হন। তারা হলেন, ছনকান্দা গ্রামের সজীব (২৩) ও চর ঘাগড়া গ্রামের সুরুজ মিয়া (৬০)।
সজীব মাঠে গরুর ঘাস কাটছিলেন এবং ঝড় শুরু হলে গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন। হঠাৎ গাছ উপড়ে পড়ে তার মৃত্যু হয়। অপরদিকে, সুরুজ মিয়ার মাথায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
সতর্কবার্তা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা
বিভিন্ন উপজেলার প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, খোলা মাঠে অবস্থান করার সময় সচেতনতার অভাবেই এসব প্রাণহানি ঘটছে। বজ্রপাতের সময় নিরাপদ স্থানে আশ্রয়ের বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।