ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা – এনএইচএস (NHS) ঘোষণা দিয়েছে, প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার ক্যানসার রোগীকে মাত্র কয়েক মিনিটের একটি ইনজেকশন দিয়েই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে।
ইউরোপে প্রথমবারের মতো, এনএইচএস ইংল্যান্ড ক্যানসার রোগীদের জন্য ইমিউনোথেরাপি ওষুধ নিভোলুম্যাব (ব্র্যান্ড নাম: অপডিভো) ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করছে।
এই ইনজেকশন প্রয়োগে সময় লাগে মাত্র ৩ থেকে ৫ মিনিট, যেখানে আগে এই ওষুধ শিরায় (IV) দিতে এক ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগত। নিভোলুম্যাব ১৫ ধরনের ক্যানসারের জন্য উপযোগী, যার মধ্যে রয়েছে ফুসফুস, কোলন, কিডনি, মূত্রথলি, খাদ্যনালী, ত্বক এবং মুখ-মাথার ক্যানসার।
ইংল্যান্ডের ঔষধ ও স্বাস্থ্যসেবা পণ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থা – এমএইচআরএ (MHRA) ইতোমধ্যে ইনজেকশন রূপে নিভোলুম্যাব ব্যবহারে অনুমোদন দিয়েছে।
প্রতি মাসে প্রায় ১,২০০ রোগী এই ইনজেকশন সুবিধা পেতে পারেন বলে জানিয়েছে এনএইচএস। চিকিৎসা প্রতি দুই সপ্তাহ বা প্রতি মাসে একবার করে দিতে হয়, ফলে এটি প্রায় এক বছরের চিকিৎসা সময় বাঁচাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এনএইচএসের ক্যানসার বিষয়ক জাতীয় ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর প্রফেসর পিটার জনসন বলেন, “ইমিউনোথেরাপি ক্যানসার চিকিৎসায় বড় অগ্রগতি। এখন যখন এটি মাত্র কয়েক মিনিটেই ইনজেকশন হিসেবে দেওয়া যাবে, তখন পুরো প্রক্রিয়াই আরও সহজ ও সুবিধাজনক হয়ে উঠবে। এতে হাসপাতালের ধারণক্ষমতা বাড়বে এবং আরও বেশি রোগীকে দ্রুত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।”
নিভোলুম্যাব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় করে ক্যানসার কোষ ধ্বংসে সহায়তা করে। এটি টি-সেল নামক একধরনের রোগপ্রতিরোধক কোষের পিডি-১ প্রোটিনে বাঁধা দেয়, যাতে ক্যানসার কোষ আর টি-সেলকে নিষ্ক্রিয় করতে না পারে। ফলে শরীর নিজেই ক্যানসার কোষ শনাক্ত করে ধ্বংস করতে পারে।
এই ইনজেকশন সংস্করণ এনএইচএসের জন্য অতিরিক্ত খরচ বাড়াবে না, কারণ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিস্টল মায়ার্স স্কুইবের সঙ্গে দামের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে।
ক্যানসার রিসার্চ ইউকে-এর প্রমাণ ও বাস্তবায়ন পরিচালক নাসের তুরাবি বলেন, “এমন উদ্ভাবনগুলো রোগীদের দ্রুত এবং আরও কার্যকরভাবে চিকিৎসা দিতে সাহায্য করবে। আমরা ক্যানসার গবেষণার এক সোনালী যুগে রয়েছি, এবং এনএইচএসকে সেই অনুযায়ী উন্নত প্রযুক্তি ও চিকিৎসা রোগীদের কাছে পৌঁছাতে প্রস্তুত থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন,
“আগামী জাতীয় ক্যানসার পরিকল্পনার মাধ্যমে সরকার চাইলেই বিনিয়োগ ও সংস্কারের মাধ্যমে এই অগ্রগতিকে আরও এগিয়ে নিতে পারে।”