বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস আজ

New-Project-34-1.jpg

বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস আজ

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

৮ মে পালিত হয় বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। এই দিনটি বিশ্বব্যাপী থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদযাপিত হয়। দিনটির মূল লক্ষ্য—থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা এবং এই জটিল বংশগত রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। থ্যালাসেমিয়া এক ধরনের বংশগত রক্তের রোগ, যেখানে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে জিনগত ত্রুটি দেখা দেয়, ফলে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর রক্তকণিকা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়।

থ্যালাসেমিয়ার কারণ

থ্যালাসেমিয়া একটি জিনগত রক্তরোগ, যেখানে শরীর পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে পারে না। ফলে রোগীকে নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের ওপর নির্ভর করতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানায়, বিশ্বের প্রায় ২৭০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। প্রতিবছর জন্ম নেয় এমন লাখ লাখ শিশু রক্তনির্ভর এই রোগ নিয়ে বেড়ে ওঠে।

বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া

বাংলাদেশে প্রতি বছর আনুমানিক সাত থেকে আট হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জন্ম নেয়। দেশে এখনো অনেকেই জানেন না তারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না। রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা ও জেনেটিক কাউন্সেলিং বাধ্যতামূলক না হওয়ায় সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা ও সচেতন পাত্র-পাত্রীর নির্বাচনই এ রোগ প্রতিরোধের প্রধান উপায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি একজন বাহক অন্য একজন বাহককে বিয়ে করেন, তাহলে তাদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার ঝুঁকি ২৫%। অথচ একটু সচেতনতা ও পরিকল্পনা নিয়েই এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।

প্রতিরোধে উদ্যোগ

বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি সংগঠন যেমন—‘ফ্রেন্ডস ফর লাইফ’, ‘থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’সহ আরও অনেকে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সহায়তা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। তারা নিয়মিত রক্তদানের ক্যাম্প, বিনামূল্যে পরীক্ষা, চিকিৎসা সহায়তা এবং কাউন্সেলিং পরিচালনা করছে।

সরকারি পর্যায়েও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেমন—জাতীয় থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এসব উদ্যোগকে আরও বিস্তৃত ও শক্তিশালী করতে হবে। প্রতিটি জেলা হাসপাতালেই থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।

একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর অভিভাবক জানান, “আমার ছেলেকে মাসে অন্তত দুবার রক্ত দিতে হয়। এটা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।”

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, থ্যালাসেমিয়া ছোঁয়াচে কোনো রোগ নয়। এটি শুধুমাত্র বংশগতভাবে ছড়ায়। তাই রোগীদের প্রতি সহানুভূতি ও সামাজিক সহযোগিতা বাড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

এই দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক— আমরা নিজেরা সচেতন হবো, অন্যদের সচেতন করবো, এবং একটি থ্যালাসেমিয়া মুক্ত ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবো।

Leave a Reply

scroll to top