‘ভারতের পানি থাকবে ভারতেই’- মোদির কড়া বার্তায় বাংলাদেশের জন্য সংকেত কী?

New-Project-17-2.jpg

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, ভারতের পানি আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে অন্য দেশে যাবে না। এই ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর ইস্যুতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। মোদি বলেন, “ভারতের পানি আগে বাইরে চলে যেত, এখন তা ভারতের জন্যই প্রবাহিত হবে” ।

মোদির বক্তব্যের প্রেক্ষাপট

মোদি বলেন, “পূর্বে ভারতের হকের পানি বাইরে চলে যেত; এখন ভারতের পানি ভারতের হকেই থাকবে, ভারতের জন্যই ব্যবহৃত হবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ভারতের নদীগুলোর পানি দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা ও সংঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু বর্তমান সরকার রাজ্য সরকারের সঙ্গে মিলে নদীগুলোকে সংযুক্ত করার জন্য একটি বৃহৎ উদ্যোগ শুরু করেছে। এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে কেন-বেতওয়া লিংক প্রকল্প এবং পার্বতী-কালিসিন্দ-চম্বল লিংক প্রকল্প, যা লক্ষ লক্ষ কৃষককে উপকৃত করবে

ইন্দাস পানি চুক্তি ও সাম্প্রতিক উত্তেজনা

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ইন্দাস পানি চুক্তি অনুযায়ী, ভারত ও পাকিস্তান ছয়টি নদীর পানি ভাগাভাগি করে। এই চুক্তির আওতায়, ভারত পূর্বের তিনটি নদীর (বিয়াস, রবি, শতদ্রু) পানি ব্যবহার করতে পারে, আর পশ্চিমের তিনটি নদীর (ইন্দাস, ঝেলাম, চেনাব) অধিকাংশ পানি পাকিস্তান পায়। তবে, সাম্প্রতিক কাশ্মীর হামলার পর ভারত এই চুক্তি স্থগিত করেছে এবং পাকিস্তানকে পানি সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে।

বাংলাদেশের জন্য প্রভাব

ভারতের পানি নীতির পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্যও উদ্বেগের কারণ হতে পারে, কারণ দুই দেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। বিশেষ করে তিস্তা ও গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। ২০২৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা ও ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়ন নিয়ে আলোচনা হয়। তবে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আলোচনায় রাজ্য সরকারকে না রাখায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

পশ্চিমবঙ্গের আপত্তি

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মোদিকে চিঠি দিয়ে জানান যে, বাংলাদেশের সঙ্গে পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে করা “একতরফা সিদ্ধান্ত”, যা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের জনগণ এই ধরনের চুক্তির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে”।

ভারতের পানি নীতির এই পরিবর্তন প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, যার কৃষি ও জীবিকা অনেকাংশে ভারত থেকে আসা নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল। এই পরিস্থিতিতে, দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া জরুরি।

বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য প্রভাব

ভারতের পানি নীতির এই পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্যও উদ্বেগের কারণ হতে পারে, কারণ দুই দেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। বিশেষ করে তিস্তা ও গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ পানি ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন বাংলাদেশের কৃষি ও জীবিকা নির্বাহে প্রভাব ফেলতে পারে।

Leave a Reply

scroll to top