ভারত-পাকিস্তানের চরম উত্তেজনার মধ্যেই ৬ মে রাতে “অপারেশন সিন্ধুর” নামে একটি সামরিক অভিযানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। হামলায় পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত ৮ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৩৫ জন। মধ্যরাতের এই হামলায় পাকিস্তানের দুটি মসজিদকেও লক্ষ্যবস্তু করে ভারত।
হামলার বিবরণ
ভারতীয় সেনাবাহিনী জইশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তৈয়বা সংশ্লিষ্ট জঙ্গি অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। হামলার লক্ষ্যস্থলগুলোর মধ্যে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদ ও কোটলি এবং পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুর অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতীয় বিমানবাহিনী রাফালে জেট থেকে SCALP ও AASM Hammer ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। হামলা প্রায় ২৩ মিনিট স্থায়ী হয়।
পাকিস্তানের পাল্টা হামলা
ভারতের হামলার পর পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ করে পাকিস্তান। ভারতের মিসাইল হামলার জবাবে দেশটির পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। এছাড়া কয়েকজন ভারতীয় সেনাকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটকের দাবিও করেছেন তিনি।
যুদ্ধবিমানকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেড সদরদপ্তরে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তানের একাধিক জায়গায় মিসাইল ছোড়ে ভারত। এর জবাবে তাৎক্ষণিকভাবে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালানো শুরু করে ইসলামাবাদ।
সীমান্তে সংঘর্ষ ও বেসামরিক হতাহত
দুই দেশের মধ্যে সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের দাবি অনুযায়ী, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে তিনজন ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান দাবি করে যে, ভারতের হামলায় অন্তত নয়জন পাকিস্তানি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে এবং ৩৮ জন আহত হয়েছে।
কূটনৈতিক ও জলসম্পদ সংক্রান্ত পদক্ষেপ
ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে ইন্দাস জলচুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করে এবং চেনাব নদীর পানি প্রবাহ কমিয়ে দেয়। এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের কৃষিখাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পাকিস্তান পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে, বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করে এবং আকাশপথ বন্ধ করে দেয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
বর্তমান পরিস্থিতি ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পরবর্তী উত্তেজনার চেয়েও গুরুতর। উভয় দেশই পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, তবে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা এখনও বিদ্যমান।