২১শে এপ্রিল, ২০২৫—একটি খোলা চিঠি ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। একজন তরুণ শিক্ষার্থী—আবদুল্লাহ আল সৈকত, কুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল বিভাগের ছাত্র, একজন গবেষণার স্বপ্ন দেখা তরুণ—তার লেখা সেই চিঠিতে উঠে আসে এক গভীর আর্তি, ক্ষোভ এবং নীরব প্রতিবাদ।
চিঠির প্রতিটি শব্দ যেন ধ্বনি তোলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশাসন ও সামগ্রিক সমাজব্যবস্থার অসহায়তার বিরুদ্ধে। ‘আমার বাবা ছিলেন কৃষকের সন্তান’, লিখেছেন সৈকত। এই একটি বাক্যেই যেন জড়ানো থাকে হাজারো স্বপ্নের সংগ্রাম। প্রবাসী বাবার পাঠানো রেমিট্যান্সে বেড়ে ওঠা সন্তানের এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। ঢাবি-বুয়েট পাশ করে দেশের বাইরে গবেষণার স্বপ্ন—এসব কোনো গল্প না, বরং আমাদের সমাজে হাজারো তরুণের বাস্তব।
সৈকতের চিঠির সবচেয়ে বেশি কাঁপিয়ে দেয় ‘মরে গেলেও আফসোস নাই’ এই লাইনটি। এ এক গভীর নৈরাশ্যের বহিঃপ্রকাশ। যে দেশ ও ব্যবস্থার কাছে তারা সুবিচার চায়, সেখানে দীর্ঘদিন ধরে জুলুম, অবিচার আর অনাস্থার পাহাড় জমে আছে বলেই হয়তো এক তরুণ গবেষক জীবন বিসর্জনের প্রস্তুতি নিতে পারে।
এই চিঠি লেখার প্রেক্ষাপট হলো কুয়েটের কিছু ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক পদপ্রত্যাশী তরুণদের আমরণ অনশন, যেখানে দাবি—প্রশাসনিক জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার। অনেকে বলছেন, এটি নিছক ছাত্ররাজনীতি বা চাকরি পাওয়ার দাবি নয়, বরং একটি বিকল শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিঃশব্দ বিদ্রোহ।
চিঠির শেষে সৈকত লিখেছেন—
“Tum Zameen Pe Zulm Likh Do, Asmaan Pe Inquilab Likha Jayega…”
এটি শুধু একটি কবিতার লাইন নয়, এটি একটি প্রতিশ্রুতি। অত্যাচার চাপা থাকলেও ইতিহাস ভুলে যায় না।
এমন একটি চিঠি যেন একটি জাতির বিবেককে নাড়া দেয়। আমরা যারা প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কথা বলি, নীতিনির্ধারকদের দায়ে প্রশ্ন তুলি, তাদের জন্য এটি একটা সতর্কবার্তা—এই তরুণরা আর ঘুমিয়ে থাকা প্রজন্ম নয়। তারা প্রতিবাদ জানাতে জানে, আত্মত্যাগের সাহস রাখে। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব, যেন তাদের সেই আত্মত্যাগে শেষ না হয়ে যায় সব।
এই দেশ কেবল অর্থনীতি বা পরিকাঠামো দিয়ে গড়া নয়, এটি গড়ে ওঠে এমন হাজারো সৈকতের স্বপ্ন দিয়ে। আর যদি সেই স্বপ্ন একে একে নিভে যেতে থাকে, তবে দেশ নামের এই কাঠামোও একদিন ফাঁকা পড়ে থাকবে।
আমরা কি প্রস্তুত সেই দিনটির জন্য?