জুমার দিনের ফজিলত ও আমল

জুমার দিনে বিশেষ আমল
নিজস্ব প্রতিবেদক ধর্ম ডেস্ক, ঢাকা

ইসলামের আলোকে সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান দিন হচ্ছে জুমাশুধু মুসলিম সমাজেই নয়, আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী জাতিগুলোর মাঝেও এই দিনকে রেখেছেন বিশেষভাবে সম্মানিত। যদিও তারা এই দিনের ফজিলত বুঝতে পারেনি, ইসলামে তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কোরআন ও সহিহ হাদিসে উঠে এসেছে জুমার দিনের ফজিলত, দোয়া কবুলের মুহূর্ত, বিশেষ আমল ও নারীদের করণীয়

 

কেন জুমার দিন সর্বোত্তম

হজরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা আগের জাতিগুলোর কাছে জুমার মর্যাদা অজ্ঞাত রেখেছেন। ইহুদিরা শনিবার, খ্রিস্টানরা রবিবার নির্ধারণ করেছে। কিন্তু আমাদের জন্য তিনি জুমার মর্যাদা প্রকাশ করেছেন।” (মুসলিম: ৮৫৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, জুমার দিন শ্রেষ্ঠ হওয়ার কারণ পাঁচটি:

  • এই দিনেই হজরত আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছেন।
  • এই দিনেই তাঁকে জমিনে প্রেরণ করা হয়েছে।
  • মৃত্যুবরণও হয়েছে জুমার দিনেই।
  • এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যেখানে বান্দার দোয়া কবুল হয়।
  • কিয়ামতও এই দিনেই সংঘটিত হবে। (ইবনে মাজাহ: ৮৯৫)

 

জুমার দিনে বিশেষ আমল

১. জুমার নামাজ ও গুনাহ মাফ

রাসুল (সা.) বলেছেন, “পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত সময়—এগুলো মধ্যবর্তী গুনাহ মাফ করে দেয়, যদি কেউ কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।” (মুসলিম: ২৩৩)

২. গোসল ও পবিত্রতা

জুমার দিন গোসল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবু দাউদের হাদিস অনুযায়ী, “যে ব্যক্তি ভালোভাবে গোসল করে, দ্রুত মসজিদে আসে এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, তার প্রতিটি কদমের বিনিময়ে এক বছরের নামাজ ও রোজার সওয়াব দেওয়া হবে।” (আবু দাউদ: ৩৪৫)

৩. আগেভাগে মসজিদে যাওয়া

রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রথমে মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন একটি উট কোরবানি করল। এরপর যে যাবে সে গরু, এরপর ছাগল, এরপর মুরগি, এরপর ডিম কোরবানি করার মতো সওয়াব পাবে।” (বোখারি: ৮৪১)

৪. দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্ত

হাদিসে এসেছে, “জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ তা কবুল করেন।” (আবু দাউদ: ১০৪৮) সময়টি আছরের পরবর্তী সময়ে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে।

৫. সুরা কাহাফ পাঠ

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, “যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে, তা পরবর্তী দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলো হবে।” (মুসতাদরাক: ২/৩৯৯)

৬. বেশি বেশি দরুদ পাঠ

রাসুল (সা.) বলেন, “তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন শ্রেষ্ঠ। এ দিনে বেশি বেশি আমার ওপর দরুদ পাঠ করো, কারণ তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।” (আবু দাউদ: ১০৪৭)

 

নারীদের করণীয়

নারীদের জুমার নামাজে মসজিদে যাওয়ার বিধান নেই। বরং হাদিসে এসেছে, “নারীদের ঘরে নামাজ পড়া বাইরে নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম।” (আল মু‘জামুল আওসাত: ৯১০১)

তবে নারীরা নিম্নোক্ত আমলগুলো করতে পারেন:

  • জুমার দিন গোসল করা
  • সুন্দর পোশাক পরিধান
  • সুগন্ধি ব্যবহার (পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ)
  • বেশি বেশি দরুদ পাঠ
  • সুরা কাহাফ তিলাওয়াত
  • নখ কাটা ও গায়ের অবাঞ্চিত লোম পরিষ্কার করা

এছাড়া নারীরা পুরুষদের উৎসাহিত করে সওয়াবের ভাগীদার হতে পারেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে সৎকাজের দিকে আহ্বান করবে, সে তার অনুসারীদের সমান সওয়াব পাবে।” (আবু দাউদ: ৪৬০৯)

জুমার দিন শুধু নামাজের জন্য নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, দোয়া, ইবাদত ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও এ দিনে নিজেদের আমল ও কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হতে পারেন। জুমার দিনের প্রতিটি মুহূর্তে রয়েছে বরকত, রহমত ও মুক্তির বার্তা।

পাঠকদের প্রতি অনুরোধ, জুমার এই বরকতময় দিনটিকে শুধুমাত্র ছুটির দিন হিসেবে না দেখে, আমল ও ইবাদতের মাধ্যমে জীবনকে আরও আলোকিত করার চেষ্টা করুন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জুমার ফজিলত বোঝার ও তা কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন।

লিখেছেন: মুহাম্মাদ নূরে আলম, তরুণ কলামিস্ট ও গণমাধ্যমকর্মী

Leave a Reply

scroll to top